কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি :: ওয়াদা করে ভোটের দিন কেন্দ্রে না গেলে হাশরের দিন ওয়াদা ভঙ্গের দায়ে বিচার হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই, নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাদের মির্জা।
শনিবার বিকেলে (৩০ ডিসেম্বর) উপজেলার রামপুর ইউনিয়নে ওবায়দুল কাদেরের পক্ষে নৌকা প্রতীকের উঠান বৈঠকের সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ সময় বৈঠকে উপস্থিত লোকজনদের উদ্দেশে কাদের মির্জা বলেন, আপনারা আমার চোখ, এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের চোখ ফাঁকি দিতে পারবেন কিন্তু উপরে যিনি আছেন তার চোখ ফাঁকি দিবেন কিভাবে? আপনারা যেহেতু ওয়াদা দিয়েছেন ভোটকেন্দ্রে যাবেন, নৌকায় ভোট দেবেন তাই আমি বলব যারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন না হাশরের দিন ওয়াদা ভঙ্গের দায়ে তাদের বিচার হবে।
এই নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা সমস্যা ও সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। তারপরও সংবিধান রক্ষার জন্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। তাই আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন। আপনাদের কাছে অনুরোধ কেন্দ্রে যাবেন, ভোট দেবেন। যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দেবেন। একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য আমরা সকল প্রস্তুতি নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের উন্নয়ন বলে শেষ করা যাবে না। চতুর্দিকে যা দেখবেন সব আওয়ামী লীগের উন্নয়ন। অতীতে কেউ কিছু করেনি। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা-মসজিদ এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ওবায়দুল কাদের সাহেবের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। ক্লোজারের কারণে এই এলাকার নদীভাঙন কমেছে। ৩ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রসডেমের টেন্ডার কিছুদিনের মধ্যে হয়ে যাবে। তাহলে পুরো কোম্পানীগঞ্জ নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে। সব ওবায়দুল কাদের সাহেবের অবদান।
কাদের মির্জা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১১টি ভাতা চালু করেছেন। এমন কেউ নেই যারা ভাতাভোগী না। এবার বয়স্ক মানুষ না পেয়ে বয়স্ক ভাতা ফেরত দিয়েছি। সামনে যদি বয়স হয় তাহলে আমরা তাদের ভাতার আওতায় আনব।
কাদের মির্জা বলেন, আমি জানি একটা বিষয়ে আপনাদের মনে কষ্ট আছে। কিছু এলাকায় গ্যাস না থাকায় মা-বোনদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। আপনাদের গ্যাসের বিষয়টি নিয়ে ওবায়দুল কাদের সাহেব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বৈশ্বিক কারণে গ্যাসের সংকট। এ সমস্যা দূর হলে প্রথমেই আমাদের এলাকায় গ্যাস সংযোগ দেবেন।
জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন নেই। আপনারা পেয়ারের পাকিস্তানে চলে যান। আপনাদের নিবন্ধন এবারও দেয়নি। দরকার হলে অন্য দল করেন। যা করেছেন তার জন্য তওবা করেন। ১৯৭১ সালে বাবার সামনে মায়ের ইজ্জত নষ্ট করেছেন। মায়ের সামনে মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করেছেন। এগুলো রাজনীতি নয়।
তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে কাদের মির্জা বলেন, তারেক জিয়া হাওয়া ভবন বানিয়ে লুটপাট করেছে। খাম্বা দিয়েছে কিন্তু বিদ্যুৎ দেয় নাই। সে এখন লন্ডনে বসে আন্দোলনের ডাক দিচ্ছে, হরতাল-অবরোধ দিচ্ছে।
এ সময় রামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজিস সালেকিন রিমন, সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জহির আহমদসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) আসনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের (নৌকা), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা (চেয়ার), জাসদের মোহাম্মদ মকছুদের রহমান (মশাল), জাতীয় পার্টির খাজা তানভীর আহমেদ (লাঙ্গল) ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের শাকিল মাহমুদ চৌধুরী (ছড়ি) প্রতীক পেয়ে প্রচারণা করছেন। এ আসনে মোট ভোটার চার লাখ চার হাজার ৯৭৭ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৯ হাজার ৬৯৩ জন ও নারী ভোটার এক লাখ ৯৫ হাজার ২৮৪ জন। ১৩২ কেন্দ্রের ৯০০টি ভোটকক্ষে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রথমবার মনোনয়ন পেয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেলেন তিনি। এর আগে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সপ্তম, নবম, দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
ওবায়দুল কাদের ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মোশাররফ হোসেন এবং মাতা ফজিলাতুন্নেছা।