কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি :: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুর হাট পৌরসভা ৮নং ওয়ার্ডে বেড়াতে আসা আরব আমিরাতের নাগরিক আলী আহম্মেদ ও তার বাংলাদেশের প্রবাসী কর্মীকে হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে টাকা ও বিমানের টিকেট হাতিয়ে নেওয়া পুলিশের সেই উপ-পরিদর্শক (এসআই) শিশির কুমার বিশ্বাসকে নোয়াখালী পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড করা হয়েছে।
এর আগে বিদেশি নাগরিককে হয়রানির অভিযোগটি পুলিশ সুপারের নির্দেশে গত শুক্র ও শনিবার দুইদিন ব্যাপী তদন্ত করেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কাজী মো. আবদুর রহিম। তদন্ত রিপোর্ট শনিবার রাতে পুলিশ সুপার বরাবর দাখিল করা হয়। তদন্তে ঘটনার সত্যতা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় রোববার দুপুরে নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এসআই শিশিরকে ক্লোজড করার আদেশ প্রদান করেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত শনিবার বিভিন্ন গণ মাধ্যম ও অন লাইনে সংবাদ প্রকাশিত হলে জেলা পুলিশ সুপার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের খাঁন পাড়া এলাকার বাসিন্দা ফাতেমা বেগম, তার বড় ভাই দেলোয়ার আনসার ও শহিদুল ইসলাম বাবলুকে নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই) এর সারজা সিটিতে ওই দেশের নাগরিক আলী আহামেদের (৬০) ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। ফাতেমা বেগম ও তার স্বজন শহিদুল ইসলাম নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে দেশে আসার সময় তাদের কফিল (মালিক) আলী আহামেদ ও বাংলাদেশ এবং নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ দেখার জন্য তাদের সাঙ্গে গত ৩ নভেম্বর কোম্পানীগঞ্জে বেড়াতে আসেন। সেখানে তারা একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার সময় কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই জাকির হোসেন ফাতেমা বেগমের বাসায় গিয়ে তারা অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করেছেন বলে দুবাই এর নাগরিক আলী আহাম্মেদের পাসপোর্ট ও তাদের বিমানের ফিরতি টিকেট দেখতে চান। এরপর তাদের বিমানের টিকেট নিয়ে যান এবং থানায় দেখা করতে বলেন। এ ঘটনার ৮ ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার রাত ৮টার সময় থানার এসআই শিশির ফাতেমা বেগমের বাসায় গিয়ে ঘরে ঢুকে দুবাই এর নাগরিক আলী আহাম্মেদকে অশালীন কথা বলেন। এক পর্যায়ে তার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে তাদেরকে গ্রেফতারের হুমকি দেন। পরে শিশিরকে ১২ হাজার টাকা দিলেন তিনি চলে আসেন।
দুই পুলিশ কর্মকর্তার হয়রানির বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে ফাতেমা বেগম ও তার স্বজনরা মোবাইল ফোনে জানান। এ ঘটনায় পুলিশ সুপার, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কাজী মো. আবদুর রহিমকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। শনিবার সকাল ১১টার সময় আরব আমিরাতের নাগরিক মোহাম্মদ আলী তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মী শহিদুল ইসলাম ও ফাতেমা বেগম পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আসেন। তাদেরকে সদর সার্কেল কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজী মো. আবদুর রহিম তিনজনের কাছ থেকে দুই পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির বিষয়টি লিখিতভাবে গ্রহণ কারেন। এরপর ওই তিনজনের মুখ থেকেও পৃথক জনাববন্দি গ্রহণ করেন। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত তাদের জনাববন্দি গ্রহণ করা হয়। শনিবার সন্ধায় তদন্তকারী কর্মকর্তা কোম্পানীগঞ্জ থানায় গিয়ে অভিযুক্ত ২ পুলিশের এসআই শিশির কুমার বিশ্বাস ও জাকির হোসেনের সঙ্গে কথা বলেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. আবদুর রহিম তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দুবাই এর নাগরিক মোহাম্মদ আলী ও তার কর্মী কোম্পানীগঞ্জের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বাবলু ও ফাতেমা বেগম শনিবার তার কার্যালয়ে এসে মৌখিকভাবে জবানবন্দি ও লিখিত অভিযোগ দিয়ে গেছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে বিদেশি নাগরিককে হয়রানির খবরটির প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে।
নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন এসআই শিশির কুমার বিশ্বাসকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে। নোয়াখালী জেলা পুলিশের কোনো সদস্য কিংবা কর্মকর্তা কোনো প্রকার অনৈতিক ও পুলিশের শৃঙ্খলা বিরোধী কাজে লিপ্ত হলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। পুলিশ জনগণের সেবক। পুলিশ দ্বারা মানুষের হয়রানি হওয়া কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়।