দীর্ঘ ২মাস পর বাবা-মায়ের বুকে ফিরলেন কোম্পানীগঞ্জের নাবিক রাজু

জলদস্যুর কবল থেকে মুক্ত হয়ে

Date:

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি :: দীর্ঘ ২ মাস অপেক্ষার পর নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শেষে জলদস্যুর কবল থেকে মুক্ত হওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর এবি (অ্যাবল সি ম্যান) হিসেবে কর্মরত নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদ আনারুল হক রাজু বাবা মায়ের বুকে ফিরেছেন।

মঙ্গলবার (১৪ মে) রাত ১১টায় নিজ বাড়ীতে এসে পৌঁছালে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন রাজুর বাবা আজিজুল হক মাষ্টার ও মা দৌলত আরা বেগম। রাজুকে একনজর দেখতে ছুটে আসেন আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীরা। অনেকের চোখেই তখন আনন্দ অশ্রু।

ছেলেকে ফিরে পেয়ে রাজুর মা দৌলত আরা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, কত কষ্ট সহ্য করেছি, এক আল্লাহ জানে আর আমি জানি। আল্লাহর ওপর ভরসা ছিল। বড় বিপদ থেকে মুক্ত হয়ে আমার ছেলে আমার বুকে ফিরেছে। একবার ভেবেছিলাম কলিজার টুকরাকে আর ফেরত পাবো না। আর কারও পরিবার যাতে এ পরিস্থিতিতে না পড়ে, সে দোয়া করি।

রাজুর বাবা আজিজুল হক মাস্টার বলেন, বাড়িতে এসে ঈদ করার কথা ছিল রাজুর। ঈদের সময় আমরা ঈদ করতে পারি নাই। আজ আমাদের ঈদ। নামাজ পড়ে মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। ছেলে নতুন পাকা ঘর করছে। এবার ছেলেকে বিয়ে করাব। শিপিং কোম্পানি ও বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল বলেই এত দ্রুত আমার ছেলে আমার বুকে ফিরে এসেছে।

বাবা মায়ের কাছে ফিরতে পেরে রাজুর চোখেও আনন্দ অশ্রু। তিনি বলেন, গত ১২ মার্চ আমাদের জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। অস্ত্রের মুখে জাহাজে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহাজের ইন্টারনেট সংযোগও। ছিনিয়ে নেওয়া হয় নাবিকদের কাছে থাকা মোবাইল ও সঙ্গে থাকা ডলার। আমাদের সবসময় অস্ত্রের মুখে রেখেছে তারা। বিভীষিকাময় সময় পার করেছি সবাই। পরিবারের কাছে ফেরা স্বপ্ন ছিল। এত দ্রুত কোনও জাহাজ জিম্মি থেকে মুক্তি পায়নি। আমাদের কোম্পানি আন্তরিক ছিল বলেই আমরা বাড়িতে আসতে  পেরেছি। আমাদের কোম্পানির সবাইকে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী বলেন, জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হয়ে বাবা মায়ের বুকে ফিরতে পারা যে কী আনন্দ তা সবার উপলব্ধি হবে না। কেবল ২৩ জন নাবিকের ২৩টি পরিবার নয়। পুরো বাংলাদেশ তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। রাজুর পরিবারের সাথে আমার যোগাযোগ আছে। রাজুর ঘরে আজ আনন্দ। আমি পুরো পরিবারের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি কামনা করছি।

প্রসঙ্গত, কার্গো নিয়ে আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ দুপুরে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজকে জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। অস্ত্রের মুখে দস্যুরা সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখে। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিম্মিকালীন সময়ে মালিকপক্ষের তৎপরতায় সমঝোতা হয় জলদস্যুদের সঙ্গে।

পরে ১৪ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ৩টা ৮ মিনিটের দিকে এমভি আবদুল্লাহ থেকে দস্যুরা  নেমে যায়। এর আগে একইদিন বিকেলে দস্যুরা তাদের দাবি অনুযায়ী মুক্তিপণ বুঝে নেয়। একটি বিশেষ উড়োজাহাজে মুক্তিপণ বাবদ ৩ ব্যাগ ডলার এমভি আবদুল্লাহর পাশে সাগরে ছুড়ে ফেলা হয়। স্পিড বোট দিয়ে দস্যুরা ব্যাগ ৩টি কুড়িয়ে নেয়। দস্যুমুক্ত হয়ে ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে  সোমালিয়ার উপকূল থেকে আরব আমিরাতের পথে রওনা দেয় এমভি আবদুল্লাহ। ২১ এপ্রিল এমভি আবদুল্লাহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়াহ পৌঁছে। সেখানে কার্গো খালাস করে জাহাজটি একই দেশের মিনা সাকার থেকে কার্গো লোড করে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

Popular

More like this
Related

মুছাপুর নদী ভাঙনে শত বছর পুরনো বাড়ীঘর বিলীন হয়ে যাচ্ছে

এএইচএম মান্নান মুন্না:ডাকাতিয়া নদীর তীব্র ভঙ্গনে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার...

এখনো নোয়াখালীতে পানিবন্দি হাজারো মানুষ

এএইচএম মান্নান মুন্না :দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে গেল স্মরণাতীতকালের ভয়াবহ বন্যা।এরমধ্যে ফেনীর পানি নেমে গেলেও নোয়াখালীতে এখনো কাটেনি বন্যার রেশ।  গত ১৫ দিন ধরে পানিবন্দি নোয়াখালীর বিভিন্নউপজেলার কয়েক হাজার মানুষ ফলে সেখানকার বন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। বন্যা-পরবর্তী খাদ্য সংকটের পাশাপাশি প্রাদুর্ভাববেড়েছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের।তাদের ঘরগুলোও এখনো বসবাস অনুপযোগী।সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন নারী-শিশু ও বৃদ্ধরা।শুক্রবার দিনভর নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার ৯ নম্বর দেউটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায় বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ আর অসহায়তার চিত্র।সেখানকার অধিকাংশ রাস্তাঘাটে এখনো হাঁটুসমান পানি।কোথাও বা তার একটু নিচে।ইউনিয়নের নবগ্রামের ব্যাপারি বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির সাতটি পরিবারই পানিবন্দি।সবার রান্নাঘরে পানি এখনো থৈ থৈ করছে।ঘরবাড়ী থেকে পানি নেমে গেলেও কাদামাটির মধ্যেই বসবাস করছেসাত পরিবারের প্রায় ৪০ জন সদস্য কোনো ঘরেই নেই মাটির চুলায় রান্নার ব্যবস্থা।শিশু,বৃদ্ধ আর অসুস্থ মানুষদের নিয়ে এই পরিবারগুলো পানিবন্দি দিন কাটাচ্ছে।এক সপ্তাহ ঘরে বাজার ছিল না, কোনো রকম শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করেছি।পানি আর কাদামাটিতে চলাচল করতে করতে পায়ে ক্ষত য়ে গেছে। পানি নামছেই না।ঘরের ভেতর ইট, কাঠ আর পাটের বস্তা বিছিয়ে হাঁটাচলা...

কাদের মির্জাসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীর মামলা

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি :: বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র কোম্পানীগঞ্জ...

একজন কর্মীবান্ধব ও মানবিক নেতা কামাল উদ্দিন

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি :: একজন প্রকৃত নেতা তিনিই যিনি...