কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি :: নোয়াখালী’র কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় দূর্নীতি, স্বেচ্ছারিতা, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্বে অবহেলা, সরকার বিরোধী লোকদের নিয়ে গোপন বৈঠকসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফয়সল আহমেদের অপসারণ ও শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন করা হয়েছে।
আজ (মঙ্গলবার) সকাল ১০ঘটিকায় উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন সড়কে উপজেলা ছাত্রলীগের আয়োজনে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। ঘণ্টাব্যাপী হাজার হাজার লোকের উপস্থিতিতে এ মানববন্ধনে একাত্বতা ঘোষণা করেন আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিকলীগ, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি সহ বিভিন্ন পেশার লোকজন।
এ সময়ে মানববন্ধন কর্মসূচীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সল আহমেদ এর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তুলে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবকালে ইচ্ছার বিরুদ্ধে এ মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। নিজের বিবেকের কাছেও দায়ী হয়ে গেছি। করোনার সময় আপনাদেরকে এখানে আজ একত্রিত হতে হয়েছে। এজন্য আমি প্রথমে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় করোনার এ সময়ে আমরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কিন্তু এ বিতর্কিত ইউএনও কয়েকটি মিটিং ছাড়া আমাদের কোন সহযোগিতা করে নাই। এ লকডাউনে উনি এক জায়গায়ও যান নাই। তিনি এ উপজেলা মসজিদের সভাপতি হয়েও সাম্প্রদায়িক মানষিকতা নিয়ে মুসল্লীরা নামাজ পড়ার অপরাধে ইমাম, মুয়াজ্জিন, মুসল্লিদের আটক করে তিনি অবরুদ্ধ করে কমিটির সদস্য আবদুল কুদুসকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেন। এতে ধর্মীয় অনুভূতি তিনি আঘাত হানায় আমাদেরকে বিতর্কে জড়িয়ে পেলেন। ছাত্রদেরকে তাদের মা-বাবা এক-দুইশ টাকা দিলে তারা খরচ করে। অথচ মাস্ক ব্যবহার না করায় তাদেরকে পাঁচ হাজার টাকা হারে জরিমানা করেন তিনি।
মেয়র আরো বলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের অনুরোধে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আমি কয়েকজন স্বেচ্ছসেবক নিয়োগ করে করোনার প্রাদুর্ভাব কমাতে পেশকারহাট রাস্তারমাথায় ব্যারিকেটের ব্যবস্থা করেছি। স্বেচ্ছাসেবকরা উনার নতুন গাড়ী না চেনায় দাঁড় করালে তিনি সে অপরাধে স্বেচ্ছাসেবকদের দু’জনের নামে ত্রিশ হাজার জরিমানা করেন। ফলে তিনি এ উপজেলার সর্বত্র সমালোচনার মুখে পড়েন। তিনি নিজেকে ছাত্রলীগ করেছেন এ পরিচয় এখানে দিতেন। কিন্তু ছাত্রলীগ দেখলেই তার মেজাজ বিগড়ে যেত।
তিনি আরো বলেন, বসুরহাটের এ খালটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাল। এটা রক্ষার করার জন্য আমরা নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু এখানে তিনটি অবৈধস্থাপন কেন ভাঙ্গা হয়নি তা কোম্পানীগঞ্জবাসী জানতে চায়। মন্ত্রীর ভাগিনার স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার জন্য মন্ত্রী নিজেই তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তা তিনি তা শুনেনি। অপরদিকে বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আবদুল হাই সেলিম ও হাজী সিরাজের অবৈধস্থাপনাও তিনি ভাঙ্গেননি। এগুলো না ভাঙ্গার পেছনে তার অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে আমি মনে করি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অত্র উপজেলার একজন অভিভাবক। অথচ তার সাথে কোন সম্মানজনক কথা না বলে তিনি অনৈতিকভাবে কাজগুলো করে পেলেন। কোম্পানীগঞ্জ অফিসার্স ক্লাব অফিসারদের জন্য। কিন্তু এখানে ভূমিদস্যু, মাদক সেবী ও বিতর্কিত লোকদের নিয়ে তাশ খেলেন। তারা বাহিরে এসে দম্ভের সাথে বলে ইউএনও’র সাথে তাশ খেলি আমাদেরকে কে কি করবে? এটা অত্যন্ত লজ্জা ও দুঃখজনক।
তিনি আরো বলেন, তার বিতর্কিত কাজে সাংবাদিকরা কোন প্রশ্ন করলে তিনি সাংবাদিকদের হুমকি দেন। সমকাল অফিসে উনারও নাকি লোক আছে। চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করাতে পারেন। তিনি আরো ধমক দেন, তার নাকি প্রধানমন্ত্রীর অফিসে লোক আছে। আজকে এ মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে বলতে চাই, আমাদের কোন লোকের বিরুদ্ধে যদি কোন মিথ্যা মামলা, কিংবা অভিযোগ করে হয়রানি করার চেষ্টা করেন তবে আপনি বাংলাদেশের যেখানেই থাকেন আপনার বিরুদ্ধে ঢাকা থেকে আমরা আন্দোলন শুরু করবো।
উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি খিজির হায়াত খান বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের মুক্তিযোদ্ধা ভাইরা কেউ মারা গেলে সরকারী আইনে ইউএনও স্টেশনে থাকলে তিনি হাজির থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করার কথা থাকলেও তিনি সেখানে না গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অস্মানজনক আচরণ করেন। জামাত-বিএনপি’র লোকদের সাথে রাতের বেলা মিটিং করেন। এ সমস্ত কারণে আমি মনে করি কোম্পানীগঞ্জে তার আর এক মিনিটও থাকার অধিকার নাই।
উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আঞ্জুমান পারভিন রুনু বলেন, ইউএনও সাহেবের নানা অনিয়ম আমরা দেখেছি। কিন্তু মুখফুটে কখনও বলিনি। আজ যখন আপনারা দাবী তুলেছেন আমি একাত্বতা ঘোষণা করলাম।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজম পাশা চৌধুরী রুমেল বলেন, এ ইউএনও সাহেব আসায় আমরা তাকে সাধুবাদ জানিয়েছি। কিন্তু দিনযত এগুচ্ছে ততই উনার উগ্রতা-অনিয়ম বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং তার অপসারণ দাবী করছি।
ইউপি চেয়াম্যান ও আ.লীগ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নুর নবী চৌধুরী বলেন, এ উপজেলায় যত ইউএনও এসেছেন অত্যন্ত সুনামের সাথে কাজ করে গেছেন। বর্তমান ইউএনও আসার পর উনাকেও আমরা সহযোগিতা করেছি। কিন্তু ইতিমধ্যে উনার নানা অনিয়মের কারণে আমরা তার অপসারণ ও শাস্তির দাবীতে মানববন্ধনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।
এ দিকে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নিজাম উদ্দিন মুন্নার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জহিরুল ইসলাম তানভীর, উপজেলা যুবলীগ সধারণ সম্পাদক গোলাম ছারওয়ার, উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শাহ পরান লিংকন প্রমুখ। আজকের মধ্যে ইউএনও’র অপসারণ না হলে আগামী রবিবার থেকে আন্দোলনকারীরা কঠোর কর্মসূচী পালন করার ঘোষণা দেন।