কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি :: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় শিক্ষা অফিসের নির্দেশনা না থাকায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদ্যাপন করেনি উপজেলার ৯০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এতে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
সুত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে মোঃ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত গত ৩০এপ্রিল ২০২৩ তারিখে ২.১৮.০১১.২২/৫৫১ নম্বর স্মারকে ও ২৫ মে সহকারী পরিচালক পলিসি-অপারেশন নাসরিন সুলতানা কর্তৃক স্বাক্ষরিত ৩৮.০১০০০০.১৪৫.৯৯.০১৯.১৬-৪৪৬নং স্মারক ও মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সুত্রের পরিপ্রেক্ষিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আলোচনা সভা ও ভিডিও ডকুমেন্টারী প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশনা থাকলেও তা পালন করা হয়নি।
২৩ মে শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি পালনের জন্য সরকারি নির্দেশনা থাকলেও উক্ত তারিখে প্রথম প্রান্তিক মূল্যায়ন পরীক্ষার সময়সূচী নির্ধারণ করেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিস।
ইতিপূর্বে, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৭মার্চ জাতীয় শিশু দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও উপজেলা শিক্ষা অফিসের নির্দেশনা না থাকায় উপজেলার কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাতীয় শিশু দিবস পালন করেনি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা অফিসার এটিএম এহছানুল হক চৌধুরী বলেন, নির্দেশনাটি আমার নজরে পড়েনি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফেরদৌসি বেগমের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫০বছর পূর্তি যথাযথ মর্যাদায় অবশ্যই পালন করার নির্দেশনা রয়েছে। যদি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তা পালন না করে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
কোম্পানীগঞ্জের একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সাথে আলাপ করা হলে তারা বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে কোন নির্দেশনা না পাওয়ায় বিদ্যালয়ে জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫০বছর পুর্তি উদযাপন করা হয়নি। নির্দেশনা পেলে অবশ্যই এ ধরনের অনুষ্ঠান গুরুত্বসহকারে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হতো।
এ ব্যাপারে শিক্ষানুরাগী গাজী উল শ্যামল বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও বিদ্যালয়ের প্রধানদের দায়িত্ব অবহেলার কারনে শিশু-শিক্ষার্থীদের জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির উদযাপন উৎসব থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর জুলি ও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির বিষয়টি অজানা থেকে যায়।
উল্লেখ্য, জুলিও কুরি হচ্ছে বিশ্ব শান্তি পরিষদের একটি সম্মানজনক পদক। ফরাসি পদার্থ বিজ্ঞানী জঁ ফ্রেডরিক জুলিও কুরি ১৯৫৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার স্ত্রীর নাম ইরেন কুরি। তারা দুজনেই নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী। ইরিনার মা-বাবাও নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী দম্পতি পিয়েরে কুরি ও মাদাম কুরি। পরে বিশ্ব শান্তি পরিষদ তাদের শান্তি পদকের নাম ১৯৫৯ সাল থেকে রাখে ‘জুলিও কুরি’। ১৯৭৩ সালের ২৩ মে ঢাকায় আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রতিনিধিরা যোগদান করেন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিশ্ব শান্তি পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশ্ব শান্তি পরিষদের তৎকালীন মহাসচিব রমেশ চন্দ্র বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি পদক প্রদান করেন এবং বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধু নন, আজ থেকে তিনি বিশ্ববন্ধুও বটে।’ সেদিন থেকেই বাঙালি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে স্বীকৃত বিশ্ববন্ধু শেখ মুজিব।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এ সম্মান কোনো ব্যক্তিবিশেষের জন্য নয়। এ সম্মান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদানকারী শহীদদের, স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানীদের। জুলিও কুরি শান্তি পদক সমগ্র বাঙালি জাতির।’