কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি :: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় কলেজ ছাত্রী মিতুর আত্মহত্যা প্ররোচনার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দুই আসামী পিতা ও পুত্রকে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দিয়েছে আদালত। রবিবার দুপুরে শুনানি শেষে আসামীদের কারাগারে প্রেরণের এ আদেশ দেন নোয়াখালী সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২ নং বিজ্ঞ আমলী আদালত।
পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২০ জুন সন্ধ্যা ৭ঘটিকায় জৈতুন নাহার কাদের মহিলা কলেজের ছাত্রী রোওশান আরা মিতুকে তার পৌরসভা ৮নং ওয়ার্ডে নানার বাড়ির মোঃ মহসিন (সাইমুন) সাইমুন মিতুকে ফরম পূরন করার জন্য মামার ঘর থেকে তাদের ঘরে ডেকে নেয়। এরপর তার সাথে জরুরি কথা আছে বলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল এর কিছুক্ষনের মধ্যে সাইমুনের বাবা-মা সহ তাদের পরিবারের লোকজন এসে মিতুকে গালমন্দ করে, কুরুচীপূর্ণ মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থাকে থাকে। সাইমুন তাকে ডেকে নেওয়ার কথা অস্বীকার করে,সাইমুনের পরিবারের সবাই মিতুকে লজ্জা থাকলে গলায় ফাঁস দিয়ে মরা উচিৎ বলে তার মুখে থুথু নিক্ষেপ করে। তারপর মিতু ঘটনাস্থল থেকে চলে আসলে আসামীরা পুনরায় তার মামার ঘরে এসে আবার অপমান করতে থাকে, পরক্ষণে মিতু লজ্জায় তার শয়ন কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
আত্মহত্যার পূর্বে মিতু দুটি সুইসাইড নোট লিখে যায়। সুইসাইডনোটে লিখা ছিল, মৃত্যুর জন্য অনেকেই দায়ী। ছনি আপু, স্মৃতি আপু, সাইমুনের আম্মু (শিল্পী বেগম), অপর নোটে লিখা থাকে ”কারো সাথে দেখা করতে গেলে যে প্রেম করতে হয় সেটা আজ পুরো বাড়ীর মানুষ জেনে গেছে। আর আমার মরা ছাড়া কোন উপায় নেই। মা,বাবা এই রকম আগে জানতাম না। জীবনে অনেক সহ্য করেছি। আর করতে পারছিনা। ইতি মিতু”।
সুইসাইড নোট পেয়ে এ ঘটনায় মিতুর মা নুর জাহান বেগম বাদী হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় সাইমুন, খোকন, শিল্পী বেগম, সোনিয়া আক্তার, স্মৃতি আক্তার, তাজকেরা মমতাজ, নুর উদ্দীন রাহেন, ফেরদৌসী আক্তার, শাহেদ কামাল, পারভীন আক্তার সহ ১০ জনকে দায়ী করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ আদালতে অভিযোগ দাখিল করলে নোয়াখালী সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২ নং আমলী আদালত ৫৩৮ /২ পিটিশান মামলা আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য নোয়াখালী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে নির্দেশ দেন। পিবিআই তদন্তে ৫ জনের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে সাক্ষ্য প্রমাণে অপরাধে জড়িত থাকায় ৩০৬/৩৪ ধারা অনুযায়ী সাইমুন কে প্রধান আসামী করে আদালতে একটি আত্মহত্যার প্ররোচিত মামলার প্রতিবেদন দাখিল করেন। বাকী ৫ জনের বিরুদ্ধে কোন সাক্ষ্য প্রমাণ ও তথ্য- উপাত্ত না পেয়ে তাদের আসামি থেকে বাদ দেন।
বাদীর ভাই সাইফুল ইসলাম জানান, রোববার দুপুরে মামলার আসামী মোঃ মহসিন (সাইমুন) ও তার পিতা নুর আলম ছিদ্দিক ( খোকন) আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিনের জন্য আবেদন করলে বাদী পক্ষের আইনজীবি সাহেদুর রহমান তুহিন বিরোধিতা করে। পরে শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে আসামী মোঃ মহসিন (সাইমুম), মোঃ নুর আলম ছিদ্দিক (খোকন) কে কারাগারে প্রেরণ করেন।