কোম্পানীগঞ্জে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি’র শিক্ষক-উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

Date:

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি :: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (এসইডিপি) আওতায় স্ট্রেংদেনিং রিডিং হ্যাবিট অ্যান্ড রিডিং স্কিলস অ্যামাং সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস স্কিমের পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় শিক্ষক-উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা আজ ২২ ফেব্রæয়ারি ২০২৩ বুধবার সকাল ১০.০০ টায় উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত কর্মশালায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কর্মসূচিভুক্ত মাধ্যমিক পর্যায়ের ৫২টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধান ও একজন সহকারী শিক্ষক (লাইব্রেরি ও তথ্য বিজ্ঞান)/সংগঠক অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীগণকে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি এবং কর্মসূচি বাস্তবায়ন বিষয়ে সামগ্রিক ধারণা প্রদান করা হয়।

উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মো: মেজবা উল আলম ভূঁইয়া। উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালায় সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জনাব শাহ্ মো: কামাল পারভেজ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মো¯তফা হামেদ তালুকদার, প্রভাষক, বাংলা বিভাগ, সরকারি মুজিব কলেজ। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার। কর্মশালা পরিচালনা করেন পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির সংশ্লিষ্ট টিম ম্যানেজার জনাব আবু হুরায়রা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কর্মকর্তাবৃন্দ। 

কর্মশালায় পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির নিম্নোক্ত কার্যক্রমসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয় :

১) স্কিমভুক্ত সকল মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার অনুক‚ল পরিবেশ তৈরি করা; 

২) তাদের বয়স ও মন-উপযোগী সুন্দর সুখপাঠ্য এবং উন্নত মানসম্পন্ন বাংলা ও ইংরেজি বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা; উপজেলা পর্যায়ে উদ্বুদ্ধকরণ ও মূল্যায়ন কর্মশালা আয়োজন করা; 

৩) প্রতিষ্ঠানে বই পড়া ব্যবস্থাপনা তদারকি করা; বই পড়ার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে পুরস্কার প্রদান করা;

৪) প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরির মান উন্নয়নে সহযোগিতা করা; বই পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা;

৫) অনলাইনে বইপড়া কার্যক্রম ও ডিজিটাল লাইব্রেরি তৈরি করা।

পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহের পাঠের মাধ্যমে সকাল ১০.০০টায় ‘উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা’ শুরু হয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জনাব শাহ্ মো: কামাল পারভেজ কর্মশালার বিষয়বস্তু এবং উদ্দেশ্য তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন। এছাড়াও পরিপূর্ণ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠার জন্য বই পড়ার উপর গুরত্বারোপ করেন।

বিশেষ অতিথি ছিলেন জনাব মোঃ তফা হামেদ তালুকদার। তিনি বাচ্চাদের বই পড়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সহযোগীতার আহবান জানান এবং বই পড়ার নানা উপকারিতার কথা তুলে ধরেন।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন জনাব মো: মেজবা উল আলম ভূঁইয়া । তিনি বলেন, “পাঠ মানে কেবল রিডিং পড়া নয়। পাঠ করে, বুঝে তা মননে প্রবেশ করল কিনা এটা যাচাই করতে হবে। পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র শুরু করলেও এর গুরুত্ব¡ অনুধাবন করে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ কর্মসূচিকে প্রোগ্রাম হিসেবে গ্রহণ করেছে।” তিনি অরোও বলেন, “স্কুলগুলোতে লাইব্ররি থাকে, কিন্তু বই থাকে না। এ জন্য লাইব্রেরিগুলোতে যথেষ্ট বইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। বাচ্চারা যাতে বই পড়ে সে বিষয়টি মনিটরিং করতে হবে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্ভর করছে আপনাদের উপর। আমি আশা করব আপনারা এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করবেন।” 

অতঃপর কর্মশালার কার্যসূচি অনুযায়ী টিম ম্যানেজার জনাব আবু হুরায়রা সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইডিপি)-এর অর্ন্তভুক্ত স্ট্রেংদেনিং রিডিং হ্যাবিট অ্যান্ড রিডিং স্কিলস অ্যামাং সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস স্কিম-এর আওতায় পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম পরিচিতি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন। 

পরবর্তীতে, ২০২৩ সালে কর্মসূচি বাস্তবায়নের কর্মপরিকল্পনা সভায় উপস্থাপন করেন জনাব, মো: সাঈদ হোসেন, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি।

কর্মশালায় উপস্থিত সকলকে একটি করে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির নোট বই, কলম, অনুষ্ঠানসূচি, ২০২৩ সালের কার্যক্রমের কর্মপরিকল্পনা ও পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মুদ্রিত কপি প্রদান করা হয়। কর্মশালা আয়োজনের যাবতীয় ব্যয়ভার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কর্তৃক নির্বাহ করা হয়।

কর্মশালায় সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নরূপ সিদ্ধান্ত সমূহ গ্রহণ করা হয়:

১। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে বইপড়া কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করানোর জন্যে প্রতিষ্ঠান প্রধান সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণকে উদ্বুদ্ধ করবেন। 

২। প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়মিত নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগঠকের কার্যক্রম তদারকি করবেন, প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক/কর্মচারীকে বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করবেন এবং সংগঠককে সহযোগিতা করতে নির্দেশনা প্রদান করবেন।

৩। প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সপ্তাহে অন্তত্য একটি লাইব্রেরি ক্লাস বাধ্যতামূলক করবেন।

৪। প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি পর্যালোচনা, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের বই পড়ায় উৎসাহ দেওয়াসহ লাইব্রেরিকে টেকসই ও কার্যকর  করার দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

৫। প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমসি সভায় নিয়মিতভাবে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা করবেন এবং সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করবেন।

৬। ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের বইপড়ার বিষয়ে সচেতন করার পাশাপশি প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে বই লেনদেনের অবস্থা পর্যালোচনা এবং স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে লাইব্রেরি উন্নয়নে ব্যবস্থা নিবেন।  

৭। সংগঠকগণ নিয়মিত বই লেনদেনের মাধ্যমে সকল সদস্যকে শ্রেণিভিত্তিক সব বই পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

৮। সংগঠকগণ বই লেনদেনের প্রতিবেদন নিয়মিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে প্রেরণ করবেন এবং তথ্য রেজিস্টারে এর কপি সংরক্ষণ করবেন।

৯। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের সময় পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিষয়েও তদারকি করবেন।

কর্মশালার সভাপতি হিসাবে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির বিভিন্ন বিষয়ের উপর দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর কারনে দীর্ঘদীন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারনে যে সকল শিক্ষার্থী ছিটকে পড়েছে তাদের দ্রুত ফেরানোসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই পড়া গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা সভা, বিতর্ক প্রতিযোগীতা, দেয়াল পত্রিকা তৈরী ইত্যাদির আয়োজন করার পরামর্শ প্রদান করা হয়। ভবিষ্যতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সকল কাজে সার্বিক সহযোগিতা করা এ মর্মে প্রতিশ্রুতি প্রদান করে কর্মশালার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

কর্মশালায় স্কিমভুক্ত ৫২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মধ্যে ৫০ জন প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ৫১ জন সংগঠকসহ (সহকারী শিক্ষক/গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান) মোট ১০১ জন অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার, জনাব মো: সাঈদ হোসেন, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মস‚চি। জনাব মো: সাইফুল ইসলাম, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি। জনাব নঈম জাহাঙ্গীর পরাগ, মনিটরিং অফিসার, পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

Popular

More like this
Related

ভেসাল জাল বন্ধ করা না গেলে অচিরেই হারিয়ে যাবে দেশিয় প্রজাতির মাছ

নোয়াখালী সংবাদদাতা :নোয়াখালীর সবগুলো খালে নিষিদ্ধ ভেসাল জাল বসিয়ে...

স্বামীকে গোপন ছবি ও মেসেজ পাঠাল সাবেক প্রেমিক, নববধূর আত্মহত্যা

নোয়াখালী সংবাদদাতা :নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্বামীর মোবাইল ফোনে সাবেক প্রেমিকের...

পরীমণির প্রথম স্বামী ট্রাকচাপায় প্রাণ হারালো

বিনোদন ডেস্ক :ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুরের শিবচরে ট্রাকচাপায় চিত্রনায়িকা পরীমণির...

বিরক্ত দীপ্তি, ক্ষোভ ঝাড়লেন ফেসবুকে

বিনোদন ডেস্ক:বিরক্ত দীপ্তি, ক্ষোভ ঝাড়লেন ফেসবুকেজুলাই বিপ্লব চলাকালীন একটি...