নিউজ ডেস্ক :: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শর্ত সাপেক্ষে মুক্তির দুই মাসের মাথায় দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। তিনি তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে কথা বলছেন নেতাদের সঙ্গে।
স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মুক্তির শর্ত এবং আইনগত বিষয়ে তিনি খুবই সচেতন। সেভাবেই তিনি তার অবস্থানে থাকবেন এবং কর্মকাণ্ড চালাবেন। এজন্য তিনি বিশেষজ্ঞ আইনজীবীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। দলের নেতৃত্বে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই আছেন। তবে খালেদা জিয়া এখন মুক্ত, তাই দলে তার যে করণীয় রয়েছে তা তিনি করবেন।
গত ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্ত হওয়ার পর স্থায়ী কমিটির সদস্যরা পবিত্র ঈদুল ফিতরের রাতে বেগম জিয়ার সঙ্গে তার বাসভবনে বৈঠক করেন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তবে এর আগে গত ১১ মে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার পরদিন ১২ মে বেগম খালেদা জিয়া তার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে ডেকে কথা বলেন।
গত মঙ্গলবার রাতে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। বুধবার রাতে সাক্ষাত্ করেন দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। বেগম জিয়া করোনা আক্রান্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে ফোন করেন। খালেদা জিয়া তার বাসা থেকে শিমুল বিশ্বাসের মাধ্যমে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্য কিছু ফল ও একগুচ্ছ ফুল পাঠান।
দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তিতে দল অনেকটা চাঙ্গা। শীর্ষ নেতাদের মাধ্যমে দেশবাসীর প্রতি যে বার্তা তিনি দিচ্ছেন তাতে নেতারা সন্তুষ্ট।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘খালেদা জিয়া আহ্বান জানিয়েছেন, জনগণ যেন ঘরে থাকে এবং এই মহামারিকে প্রতিরোধ করবার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে সমস্ত বিধান দিয়েছে তা যেন তারা মেনে চলে। বেগম জিয়া সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন যে, এত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও বিএনপির নেতাকর্মীরা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছেন।
তিনি বলেছেন, এখন সাহস না হারিয়ে দাঁড়াতে হবে।’ এদিকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দলীয় প্রধানের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। তবে মানসিক অবস্থাটা তার অনেক ভালো হয়েছে।’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ঈদের সৌজন্য সাক্ষাত্ হিসেবেই গিয়েছিলাম বেগম জিয়াকে দেখতে। চেহারায় তাকে ফ্রেশ লেগেছে। তবে অসুস্থতা আগের মতোই আছে। তার বাম হাত বেঁকে গেছে। তুলতে পারেন না, ডান হাতেও ব্যথা। তবে তার মনোভাব আগের মতোই অটুট আছে।’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বললাম, কেমন আছেন। তিনি জানালেন, ঈদুল ফিতরের দিনে জাউ ছাড়া কিছু খেতে পারেননি। আজ একটু সেমাই খেয়েছেন।’
এদিকে একটি সূত্র জানায়, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কার্যকর দেখতে চান খালেদা জিয়া। ঐক্যফ্রন্ট গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গতকাল বলেন, ‘বেগম জিয়া জোট নিয়ে পজিটিভ। রাজনীতি না থাকলে কারো জন্যই লাভ হবে না। উনি হয়তো সেটা বুঝেছেন। আর সেটা করতে হলে সবাইকে নিয়েই করতে হবে।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের অনেক নেতা বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। পর্যায়ক্রমে তিনি সকলের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাক্ষাত্ দিবেন।