এএইচএম মান্নান মুন্না:
হাজারো অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সবুজ নোবিপ্রবির ‘ময়না দ্বীপ’ কুয়াশাচ্ছন্ন পথ আর ঘাসের ওপর শিশির জানান দিচ্ছে শীত এসেছে। এই শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে জেলা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ময়না দ্বীপে আসতে শুরু করেছে কাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন অতিথি পাখির জলকেলিতে মুখর হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই দেখা মিলছে ঝাঁকে ঝাঁকে হাজারো রং বাহারি অতিথি পাখির। অতিথি পাখিতে দেখতে দর্শণার্থী ভিড় করছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। দিনভর জলকেলি, খুনসুটি সেই সঙ্গে কিচির-মিচির শব্দ, কখনো নীল আকাশে ঝাঁক বেঁধে নান্দনিক কসরতে ডানা মেলে পাখিরা। যা দেখতে ক্যাম্পাসে ভিড় করছেন পাখি প্রেমীরা। অগণিত পাখির কিচির-মিচির শব্দে ঘুম ভাঙছে হলে থাকা শিক্ষার্থীদের। প্রতিবছর শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি পাখি আসতে শুরু করে। সাধারণত শীতে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে পাখিরা নোবিপ্রবি’র ময়না দ্বীপে আসে। এরমধ্যে পরিযায়ী সরালি, বালি হাঁস, দেশীয় পানকৌরী ও সাদা বক রয়েছে। নোবিপ্রবি’র ময়না দ্বীপ নিরাপদ আশ্রয়স্থল হওয়ায় অতিথি পাখিরা এখানে অবস্থান করে। ময়না দ্বীপ ঘুরে দেখা যায়, কিছু পাখি ঝাঁক বেধে আপন মনে সাঁতার কাটছে। কিছু কচুরিপানা ও শাপলার পাতায় আপন মনে বিশ্রাম নিচ্ছে।
কিছু পাখি আবার আকাশে উড়ছে। আবার পরক্ষণেই ঝাঁপ দিচ্ছে জলে। পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখর চারদিক।
সবুজ গাছপালা আর দিনভর ময়না দ্বীপের জলে পাখিদের ভেসে বেড়ানো ও জলকেলি খেলা চলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সন্ধ্যা হলে পাখিগুলো আশ্রয় নিচ্ছে ময়না দ্বীপের গাছে। সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস থেকে অধিকাংশ হাঁসজাতীয় পাখিরা আসতে শুরু করে। তবে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পাখি দেখা যায়। সকাল দুপুর বিকেলে
পাখির ওড়াউড়ি আর জলকেলিতে মুগ্ধ হন বেড়াতে আসা পর্যটকরা। অনেকেই ছবি তোলেন আবার কেউ পাখির ওড়া উড়ির দৃশ্য ভিডিও ধারণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনভারমেন্টাল সাইন্স ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস সৌরভী বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকি। পাখির কিচিরমিচির ডাকে আমরা ঘুম থেকে জাগি। অতিথি পাখির এ কলকাকলি ক্যাম্পাসকে মুগ্ধ করে রাখে এবং প্রতিটি শিক্ষার্থী এতে মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করে।
এতে করে আমাদের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বহুগুণ বেড়ে যায়। ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী খালেদ মাহমুদ ফুয়াদ বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসের সব থেকে সুন্দর দিক হলো শীতকালে অতিথি পাখির আগমন। এই অতিথি পাখিকে উপলক্ষ্যে ক্যাম্পাসে দর্শনার্থীর সংখ্যা আগের থেকে বেড়ে গেছে। আশপাশের মানুষেরা অতিথি পাখি দেখতে আসে এতে আমাদেরও ভালো লাগে। আমাদের উচিত এই সৌন্দর্য ধরে রাখা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনেরও উচিত অতিথি পাখি সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের ডেপুটি চিফ
মেডিকেল অফিসার ডা. ইসমত আরা পারভিন তানিয়া বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিযায়ী পাখি আসতে শুরু করেছে। মেডিকেল সেন্টার ময়না দ্বীপের সঙ্গে হওয়ায় আমরা সব সময় তাদের কিচিরমিচির শব্দ শুনি। আমাদের অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে যা কখনো বলে বুঝানো যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নাহিদ আক্তার বলেন, পরিযায়ী পাখি আড়াল পছন্দ করে। তারা মানুষ দেখলে ভয় পায়। তারা পোকামাকড় আর নতুন জন্ম নেওয়া উদ্ভিদ ও উদ্ভিদাংশ খেয়ে থাকে। তাদের আবাসস্থল যদি
নিরাপদ হয় তাহলে তারা আমাদের কাছে থাকবে, না হয় চলে যাবে। যেহেতু তারা অতিথি তাই তাদের নিরাপদ আবাসস্থল তৈরিতে সবার কাজ করা উচিৎ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অতিথি পাখি আমাদের পরিবেশের জন্য উপযোগী। এক ধরনের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে এরা ফসলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। যদি নিরাপদ ও দর্শনার্থীর কোলাহল কম থাকে তাহলে পাখির সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, বছর ময়না দ্বীপকে ধান চাষের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছিল। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর লিজ বাতিল করি। যেহেতু পরিযায়ী আমাদের অতিথি তাই তাদের নিরাপদ আবাসস্থলের জন্য আমরা ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি আমরা ময়না দ্বীপকে।
উপদেষ্টা স্যারের কাছে প্রেরণ করেছি। আমরা মনে করি পরিযায়ী পাখি যদি আমাদের এই অঞ্চলে নিরাপদ মনে করে তাহলে তারা আগামীতে মেঘনার অববাহিকায় আসবে। এতে করে পরিবেশের সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। কেউ যেন পাখি শিকার না করে, তাদের ঢিল ছুড়ে না মারে এবং তাদের বিরক্ত না করে সেজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।