টাইম ডেস্ক:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে নিহত আলমগীর হোসেন’র স্ত্রী আজও প্রিয় স্বামীর আলমগীর হোসেনের শেষ মুহূর্তের আবেগময় স্মৃতি আঁকড়ে ধরে আছেন হোসনে আরা আক্তার। স্বামীর সাথে তার হৃদয় বিদীর্ণ করা শেষ মুহূর্তগুলোর স্মৃতিচারণ করে বলেন,
ফুটফুটে নবজাতক আইরা মনির বয়স মাত্র দেড় মাস। শিশুটির পৃথিবীর আলো দেখার আগে আইরা মনি হারিয়েছেন তার বাবা আলমগীর হোসেনকে। এখন সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কেঁদে দিন কাটে স্ত্রী হোসনে আরার।
আলমগীর হোসেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার আমিশাপাড়া ইউনিয়নের কাজিরখিল গ্রামের নুরু মিয়া সর্দার বাড়ির শাহজাহানের ছেলে।
জানা যায়, আলমগীর হোসেন ঢাকায় বাস চালিয়ে পরিবারের যাবতীয় খরচ যোগাতেন। ৫ আগস্ট উত্তরার রাজলক্ষ্মীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। তখন স্ত্রী হোসনে আরা ছিলেন সাত মাসের গর্ভবতী। এরপর থেকে তার সুখের পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে পড়েন তিনি।
আলমগীর হোসেনের স্ত্রী হোসনে আরা আক্তার বলেন, আমার স্বামী বাস চালিয়ে আমাদের সংসার চালাত। আমার দুই ছেলে। তার অনেক ইচ্ছা ছিল একটা মেয়ে সন্তানের। তার মৃত্যুর প্রায় দুই মাস পর ২৯ সেপ্টেম্বর মেয়ে পৃথিবীতে এসেছে ঠিকই কিন্তু তার বাবা তাকে দেখে যেতে পারল না। আমার মেয়েটা জন্মের আগেই এতিম হয়ে গেছে। ছেলেরা এখনো মনে করে তাদের বাবা বাড়ি আসবে। বড় ছেলে বলে তার বাবা সাইকেল নিয়ে আসবে কিন্তু আমি ত জানি, তাদের বাবা চিরদিনের জন্য চলে গেল।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন ৫ আগস্ট আমার স্বামীর বাস চালানোর ডিউটি ছিল না। তিনি উত্তরার খাল পাড়ের বাসায় ঘুমিয়ে ছিল। আমি তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলি। তিনি দুপুরে রাজলক্ষ্মীতে গিয়েছিল পরিস্থিতি দেখার জন্য। সেখানে পুলিশের গুলিতে মারা যায়। গুলিতে তার মাথার মগজ আলাদা হয়ে যায়। তার কবরে আলাদা পলিথিনে মগজসহ দাফন করা হয়েছে। আমার শ্বশুরের দুই সংসার। আমার স্বামী প্রথম সংসারের। শ্বশুর বয়স্ক মানুষ তিনি ঢাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। দুই ছেলে ও এক মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এখন অন্ধকার দেখছি। আল্লাহ জানে আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে।
আলমগীর হোসেনের চাচি তাসলিমা আক্তার বলেন, আলমগীর আমাকে দেখলে মা বলে ডাকত। ছেলেটা মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে কষ্টে দিন পার করছে। আলমগীরের মৃত্যুর দুই মাসের মধ্যে তার স্ত্রীর কন্যা সন্তান হয়েছে। নবজাতক নিয়ে সে খুব কষ্টে আছে। বারবার অপারেশন করায় তার কোনো কাজ করার সুযোগও নেই।
সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাছরিন আকতার বলেন, আমি নতুন এসেছি। খবর পেয়ে আলমগীর হোসেনের স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। সরকারের কাছে আমরা তালিকা পাঠিয়েছি। বড় আকারের সরকারি সহায়তা তিনি পাবেন। তাছাড়া উপজেলা প্রশাসন সব সময় তাদের পাশে থাকবে। আমি সব সময় খোঁজ খবর নেব।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, আমি যোগদানের পর বিভিন্ন উপজেলায় শহীদ পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। শহীদ আলমগীর হোসেনের পরিবারের কথা জানা ছিল না। আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি জানিয়েছি। জেলা প্রশাসন সব সময় আলমগীরের পরিবারের পাশে থাকবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।