নোয়াখালী টাইমস্ ডেস্ক :: কেন্দ্রীয় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অনুমোদন দেওয়া চট্টগ্রাম জেলা কমিটিকে সহযোগিতা করতে আহ্বান জানানো হয়েছে এক সংবাদ সম্মেলনে। শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এই আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে চট্টগ্রামের সকল সাংস্কৃতিক সংগঠন, সংস্কৃতিকর্মী, প্রশাসন ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, শ্রেণি-পেশার সংগঠনসহ সবাই উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদ অনুমোদিত উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, ‘উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সকল পর্যায়ে সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং বিশাল এই কর্মযজ্ঞে সবার মতামতকে ধারণ করে সুশৃঙ্খল সংগঠনের এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। ‘সমাজে বিদ্যমান অনৈক্য ও বিভাজনের সংস্কৃতির মধ্যেও একথা আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে, উদীচী একমাত্র সাংস্কৃতিক সংগঠন যে প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারে দৃঢ় থেকে পঞ্চাশ বছরেরও অধিককাল সাংগঠনিক ঐক্য বজায় রেখেছে। সাংগঠনিক ঐক্য ও শৃঙ্খলার এই অনন্য শক্তির উৎস হচ্ছে সংগঠনের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রের প্রতি আমাদের সীমাহীন আনুগত্য।
চট্টগ্রামে সংগঠনটির নামে নানা কর্মসূচি পালন করে সবাইকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘গভীর দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য ও গঠনতন্ত্রে বর্ণিত শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় উদীচী’র সর্বোচ্চ ফোরাম জাতীয় সম্মেলন চট্টগ্রাম জেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে।’ ‘কিন্তু চট্টগ্রাম জেলার কয়েকজন সদস্য জাতীয় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এবং উদীচীর ব্যানারে একের পর এক কর্মসূচি পালন করে চলেছেন, যা সারাদেশের উদীচী কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে।
অমিত রঞ্জন দে বলেন, ‘ক্রমাগত অসাংগঠনিক আচরণের দায়ে দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় চট্টগ্রামের কয়েকজন সদস্যের সাধারণ সদস্যপদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা সেইসব সদস্যদের জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেও বিষয়টি সকলকে জানানো হয়েছিল। চট্টগ্রামের বহুল প্রচারিত পত্রিকাগুলোতে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছিল।
উদীচীর এই নেতা বলেন, চট্টগ্রাম জেলা কমিটি বিলুপ্তির পর যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সেখানে উদীচীর কার্যক্রম পুনরায় সচল করা হয়েছে। ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত জেলা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়েছে এবং ওই কমিটি কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
কমিটিতে জসিম চৌধুরী সবুজকে সভাপতি ও অসীম বিকাশ দাশকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়, যা ধারাবাহিক কার্যক্রমের মাধ্যমে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে চলেছে।
বৈধ কমিটি ছাড়া অন্য কেউ উদীচীর নাম ব্যবহার করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে অমিত রঞ্জন দে বলেন, আমরা আজকের এই সংবাদ সম্মেলন থেকে কেন্দ্রীয় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী অনুমোদিত চট্টগ্রাম জেলা সংসদকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করার জন্য সকলের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদ অনুমোদিত বৈধ কমিটি ব্যতীত অন্যদের উদীচীর নাম, লোগো ব্যবহার করে কার্যক্রম পরিচালনা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।
‘বিভিন্ন সময়ে আমরা তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি। তারাও এক পর্যায়ে দুইটি চিঠি দিয়েছিলেন। এর মধ্য দিয়ে তারা অঙ্গীকার করেছিলেন চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারির পরে আর কোনো কর্মসূচি দেবেন না। এরপরও তা অব্যাহত রাখা হয়। আজকের পরও যদি অনুমোদিত বৈধ কমিটি ব্যতীত অন্য কেউ কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করে তাহলে কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। সেটা আইনগত বা অন্য যে কোনো পদক্ষেপ হতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে অমিত রঞ্জন দে বলেন, ‘অসাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করায় ইতিপূর্বে চট্টগ্রামের ১১ জনের সদস্য পদ বাতিল করা হয়। তারা হলেন— চন্দন দাশ, প্রবাল দে, বিধান বিশ্বাস, শীলা দাশগুপ্ত, জয় সেন, ভাস্কর রায়, দীপা বিশ্বাস, অন্তরা দে, রমেন দাশগুপ্ত, সঙ্গীতা ঘোষ ও শিবু চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি জামশেদ আনোয়ার ও সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম। এসময় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি মোল্লা হাসিবুর রসুল, সহ-সভাপতি একরামুল কবীর, সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ নুর, যুগ্ম আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন ও সদস্যসচিব জহির উদ্দিন বাবর উপস্থিত ছিলেন।