নিউজ ডেস্ক :: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বিষোদগার করলেন নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে তিনি বলেছেন, ‘আপনি (ওবায়দুল কাদের) আওয়ামী লীগের ক্ষতি করছেন। আপনি নোয়াখালীর মানুষের কাছে ঘৃণিত ব্যক্তি। আপনার ভাইকে (আবদুল কাদের মির্জা) লেলিয়ে দিয়েছেন। আপনার ভাইকে থামান, না হলে আমার হাতে ছেড়ে দিন।’
তিনি আরও বলেন, ‘কাদের সাহেব (সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী) আপনাকে আমি ঘৃণা জানাই, আপনি বিচার করতে জানেন না। আপনি না পারলে, আপনার ভাইকে একদিনের জন্য আমার হাতে দিন, পিচঢালা রাস্তায় তাকে ছেচিয়ে নেব।’
একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, ওবায়দুল কাদেরের বাবা রাজাকার, তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে। আপনি রাজাকারের বংশধর। সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতাল থেকে লাইভে এসব কথা বলেন তিনি।
১৮ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ওই লাইভে এমপি একরাম বলেন, ‘প্রিয় নোয়াখালীবাসী আমাকে চিনতে পেরেছেন কি না জানি না। আমার নাম একরাম চৌধুরী। তিনবারের এমপি। সদর- সুবর্ণচরের আপনাদের আদরের চৌধুরী। আমার হার্টে ৫ বার রিং বসিয়েছি। অনেক চেষ্টা করেছি আপনাদেরকে ভালোবাসা দিতে। এর মধ্যে কিছু ঘটনা আমাকে ব্যথিত করেছে। আমার ছোটকালের বন্ধু নোয়াখালী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর ওয়াদুদ পিন্টুকে টেলিফোনে অনেক আজেবাজে কথা বলেছি।’
এ কারণে আমার স্ত্রী আমাকে ভয়েস এসএমএস পাঠিয়ে বলেছেন, ‘তোমার চেহারা দেখার চেয়ে তোমার মৃত্যুর চেহারাটা দেখাই ভালো। এতে আমি খুবই ব্যথিত হয়েছি। আজ লাইভে আসার কারণ হলো নোয়াখালী বিএনপির ঘাঁটি ছিল। দীর্ঘ ২০ বছর পরিশ্রম করে এটাকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বানিয়েছি।’
তিনি জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমকে ‘জালিমের চেয়েও খারাপ’ বলে আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘তিনি বিগত ২০ বছর ধরে চরবাটায় দুঃশাসন করেছেন। তিনি দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী ও ওবায়দুল কাদের ভাইকে ভুল বুঝিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হয়েছেন। কিন্তু সেটা বন্ধ করা আমার জন্য মিনিটের ব্যাপার ছিল মাত্র। কিন্তু আমি তা করিনি। ওবায়দুল কাদের সাহেব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার সুবিধার জন্য।’
আমি ওবায়দুল কাদের সাহেবের বিরুদ্ধে ভোট করেছিলাম। প্রচুর ভোট পেয়েছিলাম। নেত্রী আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে দলে টেনে নিয়েছেন। ২০০৮ সালে এসে আমাকে আবার সদর আসনে মনোনয়ন দিয়েছেন। সে নির্বাচনে মালেক উকিল সাহেবের পরিবার মেজর মান্নানের ভোট করেছিলেন, যোগ করেন তিনি।
ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন তিনি তার ভাই কাদের মির্জাকে আমার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য লেলিয়ে দিয়েছেন।কাদের মির্জাকে প্রশ্ন করে একরাম বলেন, আপনি যে আজ সাধু সাজেন আপনি আমার কাছ থেকে কত কোটি টাকা নিয়েছেন? কোম্পানিগন্জের মানুষ সারাজীবন আপনাকে ঘৃনা করবেন।
নোয়াখালীবাসীর উদ্দেশে একরাম বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সেলিম থেকে আপনারা সাবধান। বিগত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দলের নেতাদের কাছে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন। বিভিন্ন খাত থেকে পারাসেন্টেজ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন পারসেন্টেজ নিয়েছি এগুলোতে আপনারই আমাকে এনে দিয়েছেন এবং চাকরির জন্য তদবির করেছেন। আমি আমার ব্যবসায়িক টাকা দিয়ে রাজনীতি করি।’
তিনি বলেন, ‘আমি অনেক কষ্ট করে জেলা আওয়ামী লীগের অফিস করেছি। আজকে আওয়ামী লীগের অফিস থেকে আমার ছবি ফেলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি ইচ্ছে করলেই আপনাদেরকে আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকতে নাও দিতে পারতাম। কিন্তু আমি সেটা করিনি। ছবি ফেলে দিয়ে কী হবে? মানুষের হৃদয় থেকে তো মুছতে পারবেন না।’
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন শাহীন বলেন, ‘একরাম চৌধুরী বর্তমানে সিঙ্গাপুর অবস্থান করছেন। বাংলাদেশের সময় সকাল ৮টায় সিঙ্গাপুরের কোনো এক হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করাতে গিয়ে লাইভে এসে দলের সাধারণ সম্পাদক, জেলা আহ্বায়কসহ সবার বিরুদ্ধেই কথা বলেছেন। তার মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে মনে হয়। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন। তাই এ নিয়ে তিনি কোনো কথা বলতে চান না।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী জেলা আওয়ামীগের আহ্বায়ক খায়রুল আনম সেলিমের বক্তব্য নিতে তার মোবাইলে কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘আমি একরামের অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে সত্য কথা বলেছি। আমৃত্যু সত্য বলে যাব। একরাম একটা পাগল। সে কী বলল না বলল এ নিয়ে আমার কিছু বলার নাই।’