ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্ক অনাকাঙ্ক্ষিত, ইসলামে নিষিদ্ধ বহু জিনিস ইসলামী বিশ্ব এডাপ্ট করেছে

Date:

গোলাম সারোয়ার :: ভাস্কর্য নিয়ে এই বিতর্ক ছিলো অনাকাঙ্খিত। ইসলামে নিষিদ্ধ বহু জিনিস ইসলামী বিশ্ব এডাপ্ট করেছে। যেমন ইসলামে ছবি তোলাও হারাম ছিলো। কিন্তু এটি বর্তমান পৃথিবীর সব আলেম-ওলামা তোলেন এবং ব্যবহার করেন। আসলে যুগের প্রয়োজন আপনি না মিটিয়ে পারবেন না। আপনি চলমান বিশ্বকে উপেক্ষা করে টিকতে পারবেন না। এটি করতে খোদা আপনাকে বলেনওনি। পৃথিবীর বড় বড় নবীদের আমলে এগুলো ছিলো। যেমন দাউদ নবী, সুলাইমান নবীর আমলে এসব শিল্পের পরিচর্যা ছিলো। আগেই বলেছি, যুগের প্রয়োজনে আপনি ছবি না তুলে পারলেন না। তেমনি সায়েন্স না পড়ে পারলেন না, ঘোড়া উট রেখে গাড়িতে না উঠে পারলেন না, ভিড়িও না করে পারলেন না, বিমানে না উড়ে পারলেন না। অমুসলিমদের বই না পড়ে পারলেন না, তাদের জ্ঞান আহরণ না করে পারলেন না। এগুলো হলো যুগের ডিমাণ্ড। এগুলোকে যদি আপনি গ্রহণ না করতে পারেন, তবে সভ্যতা আপনাকে গ্রহণ করবে না। পরিণামে আপনি হবেন বিচ্ছিন্ন। ইউরোপ-আমেরিকাতে চরমপন্থী জঙ্গিদের আজকের অবস্থার কারণ হলো এটাই। তারা সে সামজে মিশতে পারেনি। তারা মূসা নবীর উম্মত, ইসা নবীর উম্মতদের সম্মান স্নেহ করতে পারেনি। অথচ তারা ছিলো আহলে কিতাব। এখন কথা হলো, ভাস্কর্য হলে আমাদের লাভ কী? ক্ষতিটাই বা কী? লাভ হলো সৌন্দর্য,স্মৃতিরক্ষা, ললিতচর্চা, সম্মান প্রদর্শন। এগুলো না করলেও তেমন ক্ষতির ব্যাপার নেই। কারণ এগুলো আমাদের ভাত কাপড় দেবে না। তবে জাতি হিসেবে আমাদের মানদণ্ড বাড়বে, মূল্যবোধ বাড়বে। কিন্তু সমস্যা হলো অন্য জায়গাতে।

তারা লালনের ভাস্কর্য আটকে দিলো। তারপর তারা এককদম এককদম করে এগোতে লাগলো। এগোতে এগোতে তাদের ধৃষ্ট্রতা এতোদূর বাড়লো যে, তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়ার হুমকি দিলো। দেখলেন অবস্থা। একজন মানুষ সারাজীবন খরচ করে ফেললেন একটি জাতির মুক্তির জন্যে। শেষে জীবনও দিয়ে গেলেন স্বপরিবারে। তার প্রতি ন্যূনতম সম্মানটুকুও রাখতে হবে না? এবং তার মেয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। এটাও তারা পরোয়া করার ধার ধারলো না। এখানেই তাদের থামাতে হবে। না হলে তারা আধুনিক সভ্যতাকেই ফেলে দিবে। তারা স্কুল-কলেজকে বাতিলের জ্ঞান বলে অফ করে দিবে। কম্পিউটারকে শয়তানের বাক্স বলে ফেলে দেবে। মেয়েদের শিক্ষাকে হারাম ঘোষণা দিয়ে তাদের ঘরে বন্দী করবে। অনৈসলামিক রাষ্ট্রগুলোর সাথে যোগাযোগ অফ করে দিবে। ব্যাংক-বীমা, শিল্প-কারখানা, জ্ঞান-বিজ্ঞান সবই তারা অব করে দিয়ে পেছনের দিকে যাত্রা শুরু করবে। পরিণামে জাতির অবস্থা হবে এ যুগের আফগানিস্তানের মতো। এই জ্ঞানহীনতাকে থামাতে হলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তো বানাতেই হবে, উপরন্তু লালন, হাসন রাজা, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, চণ্ডীদাস-সহ সকল বাঙালি রত্নের ভাস্কর্য বানাতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে এগুলো ইসলামি বিশ্বের অন্যান্য দেশেও আছে। আমরা আসমান থেকে পড়া ইসলামী দেশ নয়।

যা সৌদি আরবে আছে, আরবের বাকি দেশে আছে, পাকিস্তান তুরস্ক ইন্দোনেশিয়া মালয়েশিয়াতে আছে, তা আমাদেরও থাকতে পারে। তবে সবচেয়ে যেটা বেশি করতে হবে তা হলো, আগামী প্রজন্মকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। যারা আজ জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে গেলো, যারা আজ আধুনিক পৃথিবীর আলো বঞ্চিত হয়ে নতুন আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্ধকারে ডুবে গেলো, তাদেরও টেনে তুলতে হবে। জাতিকে এগোতে হলে দেশের সব সন্তানকে একই শিক্ষার রূপলেখায় বড় করে তুলতে হবে। ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা, বাংলা মাধ্যম শিক্ষা, কওমি মাধ্যম শিক্ষা- এই তিনটি ধারাকে একই ধারায় নিয়ে আসতে হবে। না হলে আগামী দিনে দ্বিধাবিভক্ত জাতি গৃহযুদ্ধে মেতে উঠবে। ভাইয়ে ভাইয়ের রক্ত ঝরাবে। একই ধরনের শিক্ষা ছাড়া এর থেকে মুক্তি নেই।

লেখক :: গোলাম সারোয়ার
বিশিষ্ট কলামিষ্ট ও সাংবাদিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

Popular

More like this
Related

বিদেশ যাওয়া হলো না কলেজ ছাত্র জাকিরের, প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ী ফেরার পথে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চৌধুরীহাট ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্র...

লক্ষ্মীপুরে উপজেলা-পৌরসভায় জামায়াতের আমির নির্বাচিত

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে উপজেলা ও পৌরসভা জামায়াতের নির্বাচিত আমিরদের শপথ...

দুদক আয়োজিত বিতর্কপ্রতিযোগিতায় ফেনী পাইলট সেরা

ফেনী প্রতিনিধি : ফেনীতে দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সেরা...

‘ছাত্ররা আন্দোলন ও সংঘাতে না জড়িয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন’ :উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

টাইম রিপোর্ট:কোনো ধরনের উসকানিতে আন্দোলন ও সংঘাতে না জড়িয়ে...