মুছাপুর ক্লোজারে বালু উত্তোলন ও নির্মাণ কাজে ত্রুটি থাকায় সল্পসময়ের মধ্যে ৩ জেলার মানুষের স্বপ্নভঙ্গ

Date:

এএইচএম মান্নান মুন্না :: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভারতের উজানের ও বন্যার পানির তীব্র তোড়ে ভেঙে গেছে মুছাপুর ২৩ ভেন্ট রেগুলেটর। রেগুলেটরটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় অত্র অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন স্বাধ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। অনেকেরই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা-মহা পরিকল্পনা সব ভেস্তে গেছে।

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় রেগুলেটরটি ভেঙ্গে যায়। থেমে নেই, রেগুলেটর এলাকার মসজিদ, দোকানসহ নানা স্থাপনা একের পর এক সব নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। এসময় রেগুলেটরটি ভেঙ্গে যাওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে শত শত নারী-পুরুষ দেখতে আসে। এদের নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয় প্রশাসনের।

সংবাদ পেয়ে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী, কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী, নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীসহ সংস্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেন।

দীর্ঘ প্রত্যাশার রেগুলেটরটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর এতদাঞ্চলের মানুষের মধ্যে তীব্র ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। রেগুলেটর বিলিন হয়ে তদস্থলে পানির স্রোতের তীব্রতা বাড়ায় ফেনীর দাগনভুইয়া, সোনাগাজী ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট উপজেলার মানুষের মাঝে নতুন করে ভয় এবং আতঙ্ক বেড়ে গেছে। শঙ্কা দেখা দিয়েছে জোয়ারের লোনা পানি প্রবেশ করে ঘর-বাড়ী, জমি ও ফসল নষ্ট হওয়ার বিষয়টি।

বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন যাবত মুছাপুর রেগুলেটরের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছিল অবৈধ একাধিক বালু মহাল। প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় চুটিয়ে এ ব্যবসা পরিচালনা করেছিলেন, মুছাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আইয়ুব আলী। আর প্রশাসনকে ম্যানেজ করার অণুঘটক হিসেবে নেপথ্য নায়কের ভূমিকায় ছিলেন, আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভা মেয়র আবদুল কাদের মির্জা

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ফেনীর সোনাগাজী, দাগনভুইয়া ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপকূলে অব্যাহত নদীভাঙ্গন ঠেকাতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে ‘নতুন ডাকাতিয়া ও পুরাতন ডাকাতিয়া-ছোট ফেনী নদীর পানি নিষ্কাশন প্রকল্পের’ আওতায় কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুরে ২০০৫ সালে প্রথম ১৯ কোটি ৪৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৩ ভেন্টের রেগুলেটর নির্মাণ শুরু হয়। ২০০৫ সালের ৮ মার্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। রেগুলেটরের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর ২৩টি ভেন্টে ২৩টি করে রেডিয়্যাল গেট ও ফ্ল্যাব গেট স্থাপন করা হয়। এ রেগুলেটরের পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা ৭৫৬.১৫ ঘনমিটার/সেকেন্ড এবং এর পানি ধারণ সমতল (+) ৪.০০ মিটার (পিডব্লিউডি)। এতে করে ৮০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি সেচ সুবিধার আওতায় আসায় খাদ্যশস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে শস্যের নিবিড়তা বেড়ে দাঁড়ায় ২২০ শতাংশে। এ নিরিখে পরবর্তী বছরে অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল প্রায় ২ লাখ ৪৬ হাজার ১১৩ মেট্রিক টন। যার বর্তমান আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ২শ কোটি টাকারও বেশি হবে বলে ধারণা করেছিল কৃষি বিভাগ।কিন্তু সোমবার সকালে রেগুলেটরটি বিলীণ হয়ে যাওয়ার পর এতদাঞ্চলের মানুষের সকল স্বপ্নস্বাধ সব নিমিষেই শেষ হয়ে গেল!

এই স্লুইসগেট নিয়ে সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন একটি সভায় বলে ছিলেন, বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে এই রেগুলেটর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবেনা। বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। এটি ভেঙে গেলে মানুষের দুর্ভোগের শেষ হবেনা। তাঁর পূর্বাভাস এখন মানুষের মুখে মুখে।

স্বাধীনতার পূর্বে ফেনীর সোনাগাজীর ‘কাজিরহাট রেগুলেটর’ ছোট ফেনী নদী গর্ভে ভেঙ্গে যাওয়ার পর সোনাগাজী, দাগনভূঞা সহ আশপাশের এলাকায় একদিকে যেমন বর্ষা মৌসুমে বন্যা কিংবা পানিবদ্ধতা দেখা দেয়, অন্যদিকে শুষ্ক মওসুমে নদীতে পানি না থাকায় ইরি-বোরোসহ রবি শষ্য চাষ ব্যাহত হয়। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানির সাথে লোনা পানি ঢুকে এতদাঞ্চলে হাজার হাজার একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হতো। বছরের পর বছর এভাবে চলতে থাকায় কৃষকরা ক্ষতির আশংকায় এ এলাকায় হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি রেখে দিতো।

মুছাপুর রেগুলেটর নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা মানুষের দীর্ঘদিনের প্রতিক্ষার অবসান হয়। এই ৩ জেলার মানুষ লোনা পানি, জলাবদ্ধতাসহ ভাঙন থেকে রক্ষা পায়। রেগুলেটরটি ভেঙে যাওয়াতে মানুষের দুঃস্বপ্ন ছাড়াএখন আর কিছুই নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

Popular

More like this
Related

কোম্পানীগঞ্জে নারীর অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যকলাপে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী: প্রতিবাদে মানববন্ধন

কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি :নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ৯ নং ওয়ার্ডে...

কোম্পানীগঞ্জে বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলাম’র বিরুদ্ধে গায়েবি পোষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ

কেম্পনীগঞ্জ প্রতিনিধি :নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির অন্যতম সদস্য শিল্পপতি মো....

মুছাপুর নদী ভাঙনে শত বছর পুরনো বাড়ীঘর বিলীন হয়ে যাচ্ছে

এএইচএম মান্নান মুন্না: ডাকাতিয়া নদীর তীব্র ভঙ্গনে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ...

এখনো নোয়াখালীতে পানিবন্দি হাজারো মানুষ

এএইচএম মান্নান মুন্না :: দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে গেল স্মরণাতীতকালের ভয়াবহ বন্যা। এরমধ্যে ফেনীর পানি নেমে গেলেও নোয়াখালীতে এখনো কাটেনি বন্যার রেশ গত ১৫ দিন ধরে পানিবন্দি নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ ফলে সেখানকার বন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।বন্যা-পরবর্তী খাদ্য সংকটের পাশাপাশি প্রাদুর্ভাববেড়েছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের।তাদের ঘরগুলোও এখনো বসবাস অনুপযোগী।সবচেয়ে...