এএইচএম মান্নান মুন্না ঃ এক কিলোমিটার কাঁচা সড়কে চার গ্রাম মানুষের দুর্ভোগ। রাস্তাটি দৈর্ঘ্য মাত্র এক কিলোমিটার কিন্তু ভোগান্তি ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের। এক দুই দিন নয়, দীর্ঘ ২০ বছরেও মাটি থেকে উন্নীত করে ইট বসেনি রাস্তাটিতে। পাকা হওয়া তো অনেক দূরের কথা। আর এই ২০ বছর কাদা-মাটি ভেঙে রাস্তাটি ব্যবহার করছে চার গ্রামের ১০ হাজারের বেশি মানুষ।
রাস্তাটি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শহরতলী বসুরহাট বাজার সংলগ্ন চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুজ্জামান পন্ডিত সড়ক নামে পরিচিত। রাস্তাটির অবস্থান বসুরহাট পৌর এলাকা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পাশেই। পৌরসভার পাশে হয়েও উন্নয়নের বাতাস লাগেনি এই গ্রামীণ সড়কে।
তবে রাস্তাটি সংস্কার বা পাকাকরণে আশার বাণী শুনিয়েছেন জনপ্রতিনিধি-সহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। তবে ফলাফল শূন্য। ২০ বছর ধরে কাদা-মাটি ডিঙিয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। সবচেয়ে বড় ভোগান্তিতে কৃষকরা। সড়ক উন্নত না হওয়ায় ফসল ঘরে তুলতে এবং বিক্রি করতে বিপাকে পড়তে হয় তাদের।
বৃষ্টির সময়ে ভোগান্তি যেন চেপে বসে। চলাচল বন্ধ হয়ে যায় সকল প্রকার যানের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া বন্ধের উপক্রম হয় শিক্ষার্থীদের। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে গেলেও নেই কোনো ভালো ব্যবস্থা।
স্থানীয়রা জানান, শান্তিপাড়া, উকিল পাড়া, বিজয় নগর ও সিদ্দিকিয়া বাজারের বাসিন্দাদের উপজেলা সদরে যাওয়ার একমাত্র পথ এই সড়কটি। রাস্তাটি পাকাকরণে একাধিকবার চেয়ারম্যান-মেম্বারকে লিখিত দিয়েছে গ্রামবাসী। তবে কোনো সুরাহা হয়নি।
বসুরহাট সরকারি মুজিব কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল ইসলাম ফাহমিদ বলেন, ‘এ সড়কটি আমাদের দুঃখ। আমি নিজে স্কুলে পড়া অবস্থায় এ সড়ক দিয়ে বর্ষাকালে কষ্ট করে গিয়েছি। অনেক সময় দুর্ভোগের কারণে স্কুলে যেতে পারিনি। কলেজে এসেও একই অবস্থা। এলাকায় কেউ মারা গেলে বাড়ি পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স আসতে পারে না। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে জরুরিভাবে হাসপাতালে নেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। সবকিছু পরিবর্তন হলেও অজানা কারণে এই সড়ক এবং আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না।’
স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ আলম জানান, এলাকাটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী এলাকা। এখানে অধিকাংশ সড়ক পাকা থাকলেও বসুরহাট বাজার-সংলগ্ন এই সড়কের মাত্র এক কিলোমিটার অংশ কেন কাঁচা রয়ে গেছে তার উত্তর কারো জানা নেই। তিনি এ বিষয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
চরকাঁকড়া ইউপি চেয়ারম্যান হাজী মোহাম্মদ শফিউল্যাহ সড়কটির কারণে এলাকাবাসীর দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘সড়কটি পাকা করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার তালিকা দেওয়া হয়েছে। তারা করবে বললেও এখনও করেনি।’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. সাহাবউদ্দিন জানান, তিনি ওই এলাকায় একাধিকবার গিয়েছেন। সড়কটির জন্য বারবার এলজিইডিকে অবহিত করেছেন। তারা করে দেবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। এরপরও পাকা না হওয়ায় তিনি নিজেই দুঃখ প্রকাশ করেন।
আবুল কালাম্ নামে এক পথচারী জানান চরকাঁকডা ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারটি পরিবর্তন হলেও চার গ্রামের পথচারীদের এই সড়কটি পরিবর্তন হয়নি। আমরা এই সড়কটির পাকা করনে জোর দাবী জানাচ্ছি।
স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন এলজিইডির কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মাহফুজুল হোসাইন জানান, কয়েকটি সড়কের পাকাকরণের তালিকা বানিয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে এই সড়কটিও আছে। আগামী অর্থবছরে এটি পাকা হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
নোয়াখালী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী একরামুল হক গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, তারা প্রতিবছরই অনেক কাঁচা সড়ক পাকা করে থাকেন। কাঁচা সড়কের তালিকা শুধু কোম্পাীগঞ্জেই নয়, পুরো জেলা থেকেই তালিকা আসে। পাকা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গুরুত্ব বিবেচনা করে সড়কগুলো পাকা করণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এবার আমরা এ সড়কটি চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।