নোয়াখালী জেলা বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা আহবায়ক আলো, সদস্য সচিব হারুন

Date:

এএইচএম মান্নান মুন্না :: বহুল প্রত্যাশিত নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নানান চড়াই উতরাই পেরিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা শেষে আকাঙ্খিত জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান হল। কমিটিতে মাহবুব আলমগীর আলোকে আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র হারুন অর রশিদ আজাদকে সদস্যচিব করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।

রবিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) কেন্দ্রীয় বিএনপি’র যুগ্ন সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটির ঘোষণা দেয়া হয়। কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক করা হয় নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি, সুবর্ণচর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি, সাবেক সুবর্ণচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও নোয়াখালী জেলা বারের সর্বাধিকবার নির্বাচিত সভাপতি এডভোকেট এ বি এম জাকারিয়াকে, সদস্য হিসেবে আছেন, সদ্য বিলুপ্ত হওয়া নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি ও নোয়াখালী জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান।

দীর্ঘদিন ধরে নোয়াখালী জেলা বিএনপির রাজনীতিতে এই কমিটিকে কেন্দ্র করে উত্তাপের আভাস নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছিল রাজনীতির মাঠ।

মাহবুব আলমগীর আলো জেলা বিএনপির রাজনীতিতে এক পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ত্যাগের তুলনায় প্রাপ্তির হিসাব ছিল কম। ঢাকায় কেন্দ্রীয় বিএনপির রাজনীতি থেকে সরে এসে তিনি নিজ জেলা নোয়াখালীর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৭৭ সালে স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হা/ না ভোটের সময় থেকেই ছাত্রদলের সাথে যুক্ত হন তিনি। এরপর কলেজে পড়াকালীন তিনি সোনাপুর কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন।

নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক ছিলেন এবং সেসময় নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে ভিপি ইলেকশন করেন। জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক থাকা অবস্থায় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সদস্য ছিলেন (দুদু-রিপন পরিষদ)। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের (জালাল বাবলু পরিষদ) সহ সম্পাদক ছিলেন। এরপর ডাকসুর ভিপি আমান উল্লাহ আমানের সাথে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ১১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটির ৮ নং সদস্য হন এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটির সহসভাপতি ছিলেন।

কেন্দ্রীয় যুবদলের (আব্বাস- গয়েশ্বর) কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এরপর যুবদলে কেন্দ্রীয় কমিটির (বুলু- আলাল) কমিটির বিশেষ সম্পাদক হন। নোয়াখালী জেলা যুবদলের সভাপতি ছিলেন। সুধারাম থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দলের দুঃসময়ে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী আন্দোলনসহ দলীয় কার্যক্রমের বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তার এই সংগ্রামী জীবনে তিনি বহুবার নির্যাতিত হয়েছেন। জেল জুলুম মিথ্যা মামলায় আদালতের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরে ঘুরে সময় কেটেছে তার। তিনি আহবায়ক পদের যোগ্য দাবিদার ছিলেন বলে জানায় নেতাকর্মীরা। যে কারণে জেলা বিএনপির আহবায়কের দায়িত্ব পাওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে উচ্ছ্বসিত হয়ে নেতাকর্মীরা মিষ্টি বিতরণ করে।

অপরদিকে সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া হারুন অর রশিদ আজাদ একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে রয়েছে তার অনেক সাফল্যের স্মৃতি। ছাত্র রাজনীতি দিয়ে শুরু তার রাজনৈতিক জীবন। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সেই থেকে তার রাজনৈতিক জীবনের উত্থান, একাধারে তিনি কয়েকবার নোয়াখালী পৌরসভা বিএনপির সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন। এরপর নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা এই নেতা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। জননন্দিত নেতা হিসেবে তিনি দুই দুইবার মেয়র নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পৌরসভা নির্বাচনে জোরপূর্বক তার বিজয় ছিনিয়ে নেয় আওয়ামীলীগ প্রার্থী শহিদুল্লাহ খান সোহেল।

উল্লেখ্য এর আগে, ২০১৬ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা বিএনপির সভাপতি পদে এডভোকেট আব্দুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক পদে মাহবুব আলমগীর আলো’কে ঘোষণা করা হয়। সেই কমিটির মেয়াদ দুই মাস যেতে না যেতেই আবারও নতুন করে কমিটি দেয়া হয়। যেখানে গোলাম হায়দার বিএসসি’কে সভাপতি করে অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সেই ২০১৬ সাল থেকে অদ্যাবধি আর কোন কাউন্সিল হয়নি।

২০১৬ সালের কাউন্সিলে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে হারুন অর রশিদ আজাদ ছিলেন একজন প্রভাবশালী প্রার্থী। সেই কাউন্সিলে তাকে সভাপতি ঘোষণা না করায় জেলা বিএনপির রাজনীতিতে দলীয় কোন্দল মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ২০১৬ সালের কাউন্সিলের পর থেকে পদবিবিহীন হারুন অর রশিদ আজাদ রাজনীতিতে খানিকটা নিষ্ক্রিয় থাকার পর দীর্ঘ নয় বছর পর জেলা বিএনপির কমিটিতে পুনরায় সদস্য সচিব হিসেবে ফিরে এসেছেন।

এদিকে নতুন হিসেব নতুন মেরুকরণে রাজনীতির মাঠে কতটুকু উত্তাপ ছড়ায় তা এখন দেখার বিষয়। তবে দীর্ঘ দিন ধরে জেলা বিএনপির কমিটিকে কেন্দ্র করে হারুন অর রশিদ আজাদের অনুসারীরা বিভক্ত হওয়ার গুঞ্জন ও রাজনীতির মাঠে উত্তাপ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকলেও তা খুব শক্তভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ্য হয়েছেন জেলা পর্যায়ের সকল সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। নবঘটিত আহ্বায়ক কমিটির সকল নেতারা দলীয় নেতাকর্মীদের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সুশৃংখল ভাবে দেশ ও দলের জন্য কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

Popular

More like this
Related

লক্ষ্মীপুরে হামলায় চার সাংবাদিক আহত

লক্ষীপুর প্রতিনিধি:লক্ষ্মীপুরে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও গুলি করেছে সন্ত্রাসীরা।...

কোম্পানীগঞ্জে প্রধান শিক্ষককে মারধর করল বিএনপি নেতা

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি :: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম চরকাঁকড়া...

বিএনপির গণসমাবেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

টাইম ডেস্ক :রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নে নোয়াখালীর হাতিয়ায় বিএনপির গণসমাবেশ...

বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন নোয়াখালীর সৌরভ,চাঁপায় নবাবগঞ্জের ফৌজিয়া

টাইম ডেস্ক:বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন নোয়াখালীর 'বর' ইঞ্জিনিয়ার এমদাদ হোসেন...