কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি :: বসুরহাট সরকারি মুজিব কলেজ মাঠেগতকাল বুধবার সন্ধ্যায় কোম্পানীগঞ্জ নাগরিক সমাজ কর্তৃক আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বক্তব্যে আবদুল কাদের মির্জা বলেন, অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত হয়ে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি বক্তব্য দেননি।
ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘ঢাকায় বসে রাজনীতি করবেন? আমার নেতাকর্মীরা আপনাদের পেছনে স্লোগান দেয়। ওবায়দুল কাদের সাহেব- পদ টেকাতে অপশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি আমাকে টেলিফোনে বলেন “তুমি আমার পদ খাবে নাকি?”। ’
কাদের মির্জা বক্তব্যের এক ফাঁকে স্লোগান দিতে থাকেন, ‘এক দফা এক দাবি, একরাম তুই কবে যাবি’। তিনি বলেন, ‘একরাম চৌধুরীর বহিষ্কার পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এ দাবিতে আগামী রোববার কোম্পানীগঞ্জে সর্বত্র আধাবেলা হরতাল পালিত হবে। এ সময় কোনো কাক-পক্ষীও উড়তে পারবে না।’
বসুরহাটের মেয়র বলেন, ‘অপরাজনীতির কাছে মাথা নতকারীরা আমার ভোটারদেরকে অভিনন্দন পর্যন্ত জানায়নি। যে দলের (আওয়ামী লীগ) জন্য সারাজীবন ত্যাগ স্বীকার করেছি, তারাও খবর নেয়নি।’ ওবায়দুল কাদেরকে ইঙ্গিত করে কাদের মির্জা বলেন, ‘ভার্চুয়াল প্রোগ্রাম দিয়ে যারা কথা রাখেনি, তারা অপশক্তির কাছে মাথা নত করেছে।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে তার ছোট ভাই বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী বলেছিলেন ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন। আমার ছেলে মেয়েদের সে চাকরি কই? গ্যাস দেবেন বলেছেন, কোন ষড়যন্ত্রে গ্যাস আসেনি তা জানি। এসব বললে তিনি (ওবায়দুল কাদের) নাকি অসুস্থ, অসুস্থ হলে অপশক্তির কাছে মাথানত করেন কীভাবে?’ সেতুমন্ত্রীর (ওবায়দুল কাদের) কাছে লোকজন কোনো অভিযোগ নিয়ে যেতে পারে না উল্লেখ করে কাদের মির্জা বলেন, ‘একরাম চৌধুরীর চামচারা সব সময় মন্ত্রীকে ঘিরে রাখে।’
কাদের মির্জা আরও বলেন, ‘বহিষ্কারের হুমকি দিচ্ছেন? বহিষ্কার করবেন, বহিষ্কার করলেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর জয়গান ও শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা বলব। গ্রেপ্তার করবেন? ১৯৮২ সাল থেকে জেল খেটে আসছি। এখন যারা ষড়যন্ত্র করেন, তখন তো তারা মায়ের পেটে ছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব, আপনি কিভাবে স্যারেন্ডার করলেন, কীভাবে আত্মসমর্থন করলেন? আমার আব্বা কী রাজাকার ছিল? ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনার আব্বা মোশারফ হোসেন রাজাকার নয়, তিনি বসুরহাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। আর যারা আমার পরিবারকে নিয়ে রাজাকার বলছে, তাদের সঙ্গে আত্মসমর্পণ করছেন।’
আবদুল কাদের মির্জা নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমার বাবা আমার ছোট, তুমি আমার ছেলের মতো। তোমার বাবার মুখের কথা-তুমি বিদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষিত, চেহারাও ভালো, তুমি তোমার অস্ত্র ফেলে দিয়ে শান্তির রাজনীতিতে আস। কথা দিলাম আমরা তোমাকে সহযোগিতা করব।’
তিনি একরামুল করিম চৌধুরীর স্ত্রী, কবিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শিউলী একরামের সমালোচনা করে বলেন, ‘পর-পুরুষের সঙ্গে যে নারী মদের আড্ডায় বসে সেই ছবি আবার ফেসবুকে ভাইরাল হয়, সে কখনোও ভালো হতে পারে না। একরাম চৌধুরী টেলিভিশন লাইভে বলেছে, আমি নাকি অসুস্থ, আমার নাকি চিকিৎসার প্রয়োজন। আমি বলবো আমার নয়, তার (একরাম চৌধুরী) চিকিৎসার প্রয়োজন।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, সাধারণ সম্পাদক নুরনবী চৌধুরী, সহসভাপতি ইস্কান্দার হায়দার চৌধুরী বাবুল, বামনী কলেজের অধ্যক্ষ রাহবার হোসেন, মেয়রের সহধর্মিণী আক্তার জাহান বকুল, বসুরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জামাল উদ্দিন, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আরজুমান পারভীন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে মেয়র আবদুল কাদের মির্জাকে বরণ করে নেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিনসহ সংবর্ধনা আয়োজন কমিটির নেতৃবৃন্দ ।৪র্থ বারের মতো নির্বাচিত ও সংবর্ধিত মেয়র আবদুল কাদের মির্জা অনুষ্ঠানে নাগরিকদের কাছ থেকে ফুল না নিয়ে নিজেই পুরো মাঠে পায়ে হেটে নারী -পুরুষ জনতার মাঝে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে অভিনন্দন জানান। নাগরিকরা এ সময়ে মির্জা ভাই, মির্জা ভাই শ্লোগান দিয়ে অনুষ্ঠানস্থল মুখরিত করে তোলেন।তাঁর এ ব্যতিক্রমধর্মী সংবর্ধনায় ভোটার ও জনতার কাছ থেকে প্রশংসা কুঁড়িয়ে নেন কাদের মির্জা।
অনুষ্ঠান শুরু করেন স্থানীয় খেলাঘর শিল্পীদের পরিবেশনায় জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে ,শেষ করেন বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম এমপি ও কর্নিয়া‘র সঙ্গীত পরিবেশনায় ।