নুসরাত হত্যা : ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের পেপারবুক প্রস্তুত

Date:

নিউজ ডেস্ক :: ফেনীর সোনাগাজী সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিল আবেদন শুনানির জন্য পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) ছাপানোর কাজ শেষ হয়েছে। পেপারবুক প্রস্তুতের পরই তা সরকারি ছাপাখানা বিজি প্রেস থেকে হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানির জন্য একটি ডেথ রেফারেন্স বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

এ প্রসঙ্গে হাইকোর্টের স্পেশাল অফিসার মো. সাইফুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, পেপারবুক ছাপানোর কাজ শেষ হয়েছে। এখন পরবর্তী কাজ চলছে।

তিনি বলেন, পেপারবুক প্রস্তুতির পর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে এই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। তবে এখনও হাইকোর্টের সেই বেঞ্চ নির্ধারণ করা হয়নি। কোর্ট নির্ধারণ করার পর বিস্তারিত জানতে পারবেন।

এর আগে নুসরাত হত্যা মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুতের উদ্যোগ নেয় সুপ্রিম কোর্ট। এরপরই সকল নথি বিজি প্রেসে পাঠানো হয়। ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় গত ২৪ অক্টোবর অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।

ওই মৃত্যুদণ্ডের রায় অনুমোদনের জন্য মামলার নথি ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ৩৭৪ ধারা মোতাবেক ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে পাঠান ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। যা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় নথিভুক্ত করা হয়।

সিআরপিসির ৩৭৪ ধারায় বলা হয়েছে, দায়রা আদালত যখন মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন, তখন হাইকোর্ট বিভাগের নিকট কার্যক্রম পেশ করতে হবে এবং হাইকোর্ট বিভাগ অনুমোদন না করা পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে না।

২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর নুসরাত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ। আলোচিত সে রায়ে মামলার প্রধান আসামি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মো. রুহুল আমিন, ছাত্র নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম, পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মো. জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে শাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, শিক্ষক হাফেজ আবদুল কাদের, প্রভাষক আবছার উদ্দিন, নুসরাতের সহপাঠী কামরুন নাহার মণি ও উম্মে সুলতানা পপি; আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মো. শামীম ও মহিউদ্দিন ওরফে শাকিল।

বিচারিক আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিলের পাশাপাশি দণ্ডিতদের পক্ষ থেকে পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল হাইকোর্টে আপিল আবেদন করেন।

২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তার মা শিরিনা আক্তার সোনাগাজী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করলে অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

মামলা তুলে না নেয়ায় ৬ এপ্রিল মাদরাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বোরকা পরা পাঁচজন। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে নুসরাতের মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে নুসরাত তাকে অগ্নিসংযোগকারীদের নাম উল্লেখ করেন।

অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান (নোমান) সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। এরপর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এ মামলার তদন্ত শেষে মাদরাসার অধ্যক্ষসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

এরপর অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত। পরবর্তীতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণসহ সকল বিচারিক কার্যক্রম শেষে ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।

অন্যদিকে নুসরাতের জবানবন্দির ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের করা মামলায় সোনাগাজীর সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে আট বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা এই মামলায় ওসি মোয়াজ্জেমকে ১০ লাখ টাকা জরিমানাও করেন আদালত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

Popular

More like this
Related

ভেসাল জাল বন্ধ করা না গেলে অচিরেই হারিয়ে যাবে দেশিয় প্রজাতির মাছ

নোয়াখালী সংবাদদাতা :নোয়াখালীর সবগুলো খালে নিষিদ্ধ ভেসাল জাল বসিয়ে...

স্বামীকে গোপন ছবি ও মেসেজ পাঠাল সাবেক প্রেমিক, নববধূর আত্মহত্যা

নোয়াখালী সংবাদদাতা :নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্বামীর মোবাইল ফোনে সাবেক প্রেমিকের...

পরীমণির প্রথম স্বামী ট্রাকচাপায় প্রাণ হারালো

বিনোদন ডেস্ক :ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুরের শিবচরে ট্রাকচাপায় চিত্রনায়িকা পরীমণির...

বিরক্ত দীপ্তি, ক্ষোভ ঝাড়লেন ফেসবুকে

বিনোদন ডেস্ক:বিরক্ত দীপ্তি, ক্ষোভ ঝাড়লেন ফেসবুকেজুলাই বিপ্লব চলাকালীন একটি...