দাম বৃদ্ধির অজুহাতে রপ্তানি বন্ধ রাখতে আবারো আলুর স্লট বুকিং বন্ধ করে দিয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ফলে ফের সক্রিয় সিন্ডিকেট। সকালে নোয়াখালীর বড় বড় বাজারগুলোতে সাধারণ ক্রেতারা আলু কিনতে গিয়ে প্রচুর হিমশিম খাচ্ছেন।
ক্রেতারা বলেন, ‘এক মুঠো ভাত আলু-ডাল দিয়ে খাবো, তাও হয়তো আর ভাগ্যে জুটবে না।’ বাজার দরের এই উঠতি-বাড়তিতে নোয়াখালীর অধিক মধ্যবিত্ত – নিম্মবিত্ত মানুষ আগামী দিনগুলোতে কিভাবে চলবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন।
নোয়াখালীর চৌমুহনী শহরসহ নোয়াখালী পৌর বাজার, দত্তেরহাট, সোনাপুর কাঁচা বাজার, কবিরহাট পৌর শহর কাঁচা বাজার, বসুরহাট পৌর শহর, দাগনভূইয়া পৌর শহর, দুধমাখা বাজার, সেবারহাট বাজার, কানকির হাট, সোনাইমুড়ী কাঁচা বাজার, কুমিল্লা সীমান্তবর্তী চাটখিল-খিলপাড়া বাজার, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া পৌর কাঁচা বাজার, আটকমলিয়া বাজার, আব্দুল্লাহ মিয়ার বাজার, ওয়াপদা বাজার, চরবাটা বাজার, ভূইয়ারহাটসহ জেলার কাঁচা বাজারের সবচেয়ে বড় আড়ৎগুলো ঘুরে একই অবস্থা দেখা গেছে।
গতকাল রবিবার থেকে কোনো আলু আমদানি হয়নি। তবে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আলু আমদানি না হওয়ায় আমদানিকারকরা যেমন আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন। তেমনি সরবরাহ ঘাটতির কারণে দেশের বাজারে আলুর দাম আরো বাড়বে বলে দাবি তাদের।
আলু আমদানিকারক সংশ্লিষ্টরা বলেন, ‘দেশের বাজারে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারত থেকে আলু আমদানি অব্যাহত রেখেছিলেন আমদানিকারকরা। তবে পশ্চিমবঙ্গে আলু ও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে গত রবিবার হঠাৎ করেই আলু ও পেঁয়াজের স্লট বুকিং বন্ধ করে দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বিষয়টি নিয়ে কয়েকদফা দেন দরবারের পর পশ্চিমবঙ্গের আলু ও পেঁয়াজ রপ্তানি হবে না এমন শর্তে মঙ্গলবার রাত থেকে আবারও স্লট বুকিং শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এতে সোম ও মঙ্গল দুদিন বন্ধের পরে বুধবার থেকে আলু ও পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। তবে অন্য প্রদেশের পেঁয়াজ রপ্তানিতে কোনো নির্দেশনা না থাকলেও আলু রপ্তানির ক্ষেত্রে বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত স্লট বুকিংকৃত আলু রপ্তানির শর্ত দেয়। এরপর নতুন করে কোন আলুর স্লট বুকিং হবে না বলেও জানিয়েছিল তারা।
পূর্বের স্লটে আলু রপ্তানি করেছে এর কিছু ট্রাক এখনও ভারতে আটকা রয়েছে। এমনকি পূর্বের স্লটের সেসব আলুর ট্রাক আটকা থাকলেও সেগুলো রপ্তানি করছে না তারা। পূর্বের স্লটের ১৬ ট্রাক আলু ভারতে আটকা পড়ে আছে তারা দিচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে সেখানে দেন দরবার চলছে হয়তোবা উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত হলে আবারও আটকে থাকা আলুগুলো দিতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি যার কারনে ঢুকবেই বলা যাচ্ছে না। যার কারণে হতাশ।
তারা আরও বলেন, নতুন করে তারা কোন আলুর স্লট বুকিং যেমন দিবেনা সেই সাথে অন্য প্রদেশের আলু রপ্তানি করতে দিবে না। তারা মাঝে মধ্যেই আলু আটকে রাখছেন যার কারণে গাড়িগুলো সঠিক সময়ে ঢুকতে না পেরে আলুর মান খারাপ হয়ে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে আবার দিলেও আলুর মান খারাপের কারণে কম দামে বিক্রি করতে হওয়ায় আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাদের এমন আচরণের কারণে আমরা এলসি করা আলু দেশে আমদানি করতে না পেরে লোকসানের মধ্যে পড়ে গেছি। আমাদের অনেকের এলসি খোলা রয়েছে সেই সাথে অনেক জায়গায় আলু খরিদের জন্য বায়না করা আছে। আবার অনেক আলু কেনাও রয়েছে ভারতে। কিন্তু সেই আলু আমরা দেশে আনতে পারছি না। এসব টাকা পয়সা ভারতীয় রপ্তানিকারক ফেরত দিবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গত শনিবার ৫২টি ট্রাকে ১৬২৭টন আলু আমদানি হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত বন্দর দিয়ে কোনো আলু আমদানি হয়নি। আলু যেহেতু কাঁচাপণ্য আমদানির সাথে সাথে দ্রুত পরিক্ষণ, শুল্কায়ন করে ছাড়করণ দেওয়া হয় যাতে করে আমদানিকারকরা বন্দর থেকে খালাস করে বাজারজাত করতে পারেন। এমনই প্রত্যাশা করেন।