মাইজদী শহরের হুইল চেয়ারে বসে মোয়া বিক্রেতা অর্জুন এখন উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন

Date:

নোয়াখালী প্রতিনিধি :: প্রতিবন্ধী হলেও অর্জুন পাল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। প্যাডেলচালিত হুইল চেয়ারে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন ঘরে তৈর মোয়া। জেলা শহর মাইজদীর ইসলামিয়া সড়কে প্রতিবন্ধী হলেও অর্জন পাল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। প্যাডেলচালিত হুইল চেয়ারে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন ঘরে তৈর মোয়া। জেলা শহর মাইজদীর ইসলামিয়া গাছ থেকে পড়ে ২০১১ সালে ভেঙে যায় কোমরের হাড়। সেই থেকে হুইলচেয়ারের জীবন। শুরুর দিকে ভিক্ষা করতেন। গত কয়েক বছর বাড়িতে তৈরি করা মুড়ি ও চিড়ার মোয়া বিক্রি করে সংসার চলছে। প্যাডেলচালিত হুইলচেয়ারের সামনে-পেছনে বস্তাভর্তি মুড়ি ও চিড়ার মোয়া নিয়ে সারা দিন ঘোরেন শহর থেকে গ্রামে।

জেলা সদর উপজেলার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের পালপাড়ার বাসিন্দা অর্জুন চন্দ্র পালের (৫২) জীবনসংগ্রাম নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বৃহস্পতিবার সকালে জেলা শহর মাইজদীর প্রধান সড়কের যানজট পেড়িয়ে এক পাশে থেকে অন্য পাশে যাচ্ছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী অর্জুন পাল। ইসলামিয়া রোডে। সড়কের পাশের একটি দোকানে মোয়া দিচ্ছিলেন তিনি। বেচা-কেনার ফাঁকে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। অর্জুন পাল বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন ১০০ কেজি মুড়ি ও ৪০ কেজি চিড়া, সঙ্গে গুড় দিয়ে মোয়া তৈরি করে বিভিন্ন বাজারে, সড়কের মোড়ের দোকানে দোকানে বিক্রি করি। এতে যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে টানাটানি করে সংসার চলে। মুড়ি, চিড়া মোয়া তৈরিতে সহযোগিতা করেন আশপাশের বাড়ির আরও ১০ জন নারী। তাঁদেরও বাড়তি আয় হয় কিছু। প্রতিদিন বেলা দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত আমার বাড়িতে মোয়া তৈরির কাজ করেন নারীরা। জনপ্রতি ৮০ টাকা মজুরি দিই তাঁদের। কিন্তু পুঁজির অভাবে এবং পরিবহন সমস্যার কারণে ব্যবসায় ভালো করতে পারছি না।

গাছ থেকে পড়ে কোমরের পেছনের হাড় ভাঙার চিকিৎসা নিতে অর্জুন পাল গিয়েছিলেন ঢাকায়। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে কালক্ষেপণ করা হয়। পরে ধারদেনা করে ভর্তি হন একটি বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু তত দিনে অস্ত্রোপচারের আর সুযোগ ছিল না বলে জানান তিনি। ফলে চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করতে হয় তাকে। এরপর তিনি ফিরে আসেন

গ্রামের বাড়িতে। হাঁটাচলা বন্ধ হয়ে যায়। প্রথম দিকে হুইলচেয়ারে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করতেন। পরে পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান ও জেলা প্রশাসনের সহায়তায় মাইজদী শহরে একটি মুদিদোকান দেন। কিন্তু গেল বন্যায় দোকানের মালামালসহ সবকিছু নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। বন্যার পানি নামার পর দোকানের জায়গায় সরকারিভাবে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়। দোকানের জায়গাটুকু ঢুকে যায় প্রাচীরের ভেতর। শেষে উপায় না পেয়ে বাড়িতে মুড়ি ও চিড়ার মোড়া তৈরি করে দোকানে দোকানে পাইকারি বিক্রি শুরু করেন।

এক দোকানে মোয়া বিক্রি করছেন অর্জুন পাল। প্রতিদিন জেলা শহর মাইজদীর ইসলামিয়া সড়কে এক দোকানে মোয়া বিক্রি করেন অর্জুন পাল। জেলা শহর মাইজদীর ইসলামিয়া সড়কে অসুস্থ বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে অর্জুন চন্দ্র পালের সংসার। এক ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। আরেকজন পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। টাকার অভাবে মায়ের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। দুই বেলা খাবার জোটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানান অর্জুন পাল। তিনি বলেন, ‘প্যাডেল চেপে হুইলচেয়ার চালিয়ে মাইলের পর মাইল মোয়া নিয়ে ঘুরে বেড়াতে বেশ কষ্ট হয়। দুই হাতে ফোসকা পড়ে গেছে। তবু বিশ্রামের সুযোগ নেই। সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়েছি অনেকবার। তবে প্যাডেলচালিত এই হুইলচেয়ার ছাড়া আর কোনো আর্থিক সহায়তা পাইনি। সরকারি, বেসরকারি কোনো সহায়তা পেলে ইঞ্জিনচালিত ছোট-খাটো একটা গাড়ি কিনে ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারতাম।’ উপজেলার কাদিরহানিফ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য বলেন, অর্জুন চন্দ্র পাল একজন প্রতিবন্ধী হলেও ভিক্ষাবৃত্তি না করে নিজের চেষ্টায় একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করছেন। সরকারি, বেসরকারি কোনো সংস্থা পর্যাপ্ত আর্থিক অনুদান নিয়ে এগিয়ে এলে অর্জুন একজন সফল ক্ষুদ্র ‍উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

Popular

More like this
Related

কোম্পানীগঞ্জে ইয়াবা ও গুলিসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি :: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়ন...

লক্ষ্মীপুরে হামলায় চার সাংবাদিক আহত

লক্ষীপুর প্রতিনিধি:লক্ষ্মীপুরে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও গুলি করেছে সন্ত্রাসীরা।...

কোম্পানীগঞ্জে প্রধান শিক্ষককে মারধর করল বিএনপি নেতা

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি :: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম চরকাঁকড়া...

নোয়াখালী জেলা বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা আহবায়ক আলো, সদস্য সচিব হারুন

এএইচএম মান্নান মুন্না :: বহুল প্রত্যাশিত নোয়াখালী জেলা বিএনপির...