এএইচএম মান্নান মুন্না :
মালিকানাধীন শত – শত একর সম্পত্তি দখল, সরকারী জায়গায় বাস্তুহারা লোকদের থেকে মাসিক ভাড়া আদায়, জেলে পরিবারের খাস জায়গা দখল, সালিশী জামানাতের টাকা ফেরৎ না দেয়া, মাছের আড়ৎ থেকে বাকিতে মাছ নিয়ে টাকা না দেয়া, সীবিচ এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, প্রতিবাদকারীদের হত্যার হুমকিসহ নানান অনিয়মের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে শত শত ভুক্তভোগী নারী-পুরুষ।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) বিকেল ৪টায় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের মুছাপুর ১নং ¯øুইচ গেইট এলাকায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে একত্বতা ঘোষণা করে স্থানীয় চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী ভুক্তভোগীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, মুছাপুর ৩টি ওয়ার্ডে ভুমিহীনদের ৯শ একর সম্পত্তি নামে-বেনামে দখল করে রেখেছেন সাবেক মুছাপুর ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম শাহীন ও মাহফুজ চৌধুরী পরিবার। এ পরিবারটি গত ১৫ বছর ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে নানা অনিয়মের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এ জমিনগুলো উদ্ধারের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নোয়াখালী জেলা ও উপজেলার প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি আরো বলেন, এ বাঁধের আশপাশে সরকারী জলাশয়গুলো সাবেক চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক চৌধুরীর পুত্র মামুন দখল করে রেখেছেন। তারা চেয়ারম্যান থাকাকালীন তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। মাহফুজুল হক চৌধুরী ও তার ভাতিজা নজরুল ইসলাম শাহীন চেয়ারম্যান থাকাকালীন থেকে তারা এ অনিয়ম ও লুটপাট করে আসছে। এ এলাকার মানুষ তাদের ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। আজকে এ এলাকার মানুষ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলা শুরু করেছে। আমি ছাড়া আমার পরিবারের কেউ এ দেশে বসবাস করেন না তারা আমেরিকায় থাকেন। আমি এলাকার মানুষদের সেবা করার জন্য এ দেশে অবস্থান করছি এবং গত ইউপি নির্বাচনে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এ এলাকার মানুষের সুখে দুখে হাসি-কান্নায় পাশে দাঁড়িয়েছি।
লিখিত বক্তব্যের বেশ কয়েকটি অভিযোগ উল্লেখ করে তিনি বলেন: মুছাপুর ইউনিয়নের কচ্ছপের বাড়ীর আবদুল করিম ও নুর আমিন এর ওয়ারিশী ৫ একর সম্পত্তি এবং আবুল কোম্পানীর ২০ একর জায়গার মালিকানা দলিল থাকা সত্বেও চৌধুরী পরিবার প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের নামে রেকর্ড করে জোরপূর্বক দখলে নেয়; ১নং ¯স্লুু গেইট এ সরকারী জায়গার উপর কোন গরীব লোকজন ব্যবসা করতে বসলে শাহীনের বাবা নাছির চৌধুরী ভাড়া আদায় করে; জেলেদের নামে বরাদ্দকৃত খাস জায়গা জোরপূর্বক দখল করে জেলেদের থেকে মাসিক ভাড়া আদায় করে তার বাবা নাছির চৌধুরী; সাধারণ মানুষের জায়গার উপর ব্রিজ-রাস্তা তৈরী করে সরকারী ও ব্যক্তিমালানাধীন ২শ একর জায়গা জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন; আবদুল ও তার প্রতিপক্ষের মাঝে বিবাদমান সালিশের নামে ৫০ হাজার টাকা জামানাত নেয় শাহীন চৌধুরীর পিতা নাছের চৌধুরী। তারা উভয় নিজেদের উদ্যোগে বিবাদ মীমাংসিত হলেও তাদের কাছ থেকে গ্রহণকৃত জামানাতের টাকা এখনও ফেরৎ দেননি; সাবেক চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরী ও তার অনুসারী মাখন খান, আনোয়ার সেলিম, ফারুক, মামুন চৌধুরী ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানীর কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায়েরও অভিযোগ তোলেন তিনি।
মানববন্ধনে অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন উপজেলা যুবলীগের সদস্য নুর হোসেন খান সাহেব, ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি নিটল, মুছাপুর ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার জাহাঙ্গীর আলম, ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ রাশেদ, ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ শেখ ফরিদ, ৯নং ওয়ার্ড মাইন উদ্দিন, ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার সাইফ উদ্দিন, মহিলা মেম্বার রূপালী বেগম, ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি দুদু মিয়া, ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি মোঃ কামাল উদ্দিন, মৌলভী বাজার সমাজ কমিটির সভাপতি মোঃ সেলিম, ৭নং ওয়ার্ড সমাজ কমিটির সভাপতি আলম মহাজন প্রমুখ।
এদিকে ভুক্তভোগী ফেনীর ব্যবসায়ী ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার আজাদ আহম্মেদ বলেন,আমি নিজেও চৌধুরী পরিবারের নির্যাতনে অতিষ্ঠ, এলাকার মানুষ বেশির ভাগ হতদরিদ্র ও অসহায়, তাই ভয়ে কেউ কখনো মুখ খুলেনি। আজ দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় মানুষ প্রতিবাদ জানাতে মানববন্ধনে এসেছেন।
অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে মুছাপুর ইউনিয়নের ৩টি ওয়ার্ডের সর্বস্তরের ভুক্তভোগী শত শত নারী-পুরুষ ও খেটে খাওয়া হতদরিদ্র ভুক্তভোগীরা ছুটে আসেন দূরদূরান্ত থেকে। মানববন্ধনে উপস্থিত দেখে স্থানীয়দের অনেক বলতে শোনা যায় চরাঞ্চলের এ খেটে খাওয়া মানুষের ভিটে-মাটি হারানোর ভয় ও দীর্ঘদিনের প্রতিবাদী আবেগ নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়াতে এসেছে নির্যাতিত নারীদের।
সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম শাহীন চৌধুরীর সাথে এ ব্যাপারে আলাপ করা হলে তিনি বলন, যে সকল ভূমি নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে এটি আমাদের ৯০ দশকেরও পূর্বের ক্রয়কৃত সম্পত্তি।
আবদুল ও আবুল কোম্পানীর ওই সম্পত্তি মালিকানা দাবী করে একটি অভিযোগ দাখিল করে বিএনপি’র শাসন আমলে তৎকালিন ইউএনও তাদের কাছ থেকে মালিকানা কাগজ পত্র চাইলে তারা কাগজ পত্র দেখাতে পারেনি।
আমাদের বিদেশে ৪/৫ টি দোকান রয়েছে আমাদের কোন অভাব নেই যে, আমরা মানুষের সম্পদ অবৈধ ভাবে দখল করে রাখবো। আমার এবং আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে তাদের আনিত অভিযোগ গুলো সত্য নয়, এটি মিথ্যা ও বানোয়াট।