সেনবাগ (নোয়াখালী) সংবাদদাতা :: সপ্তম শ্রেণি থেকে টিউশনি করিয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করেছে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নাহিমা আক্তার। অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা নাহিমা এবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজে ভর্তির সুযোগও পেয়েছে। তবে আর্থিক অনটনের কারণে নাহিমার কলেজে পড়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নাহিমার বাবা নেই। তাই এখন নাহিমার পড়াশোনার ভবিষ্যৎ নিয়ে মা হাসিনা বেগমও চিন্তিত।
নাহিমা এ বছর উপজেলার শের-ই-বাংলা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। সে মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজারামপুর গ্রামের মৃত মো. জাকের হোসেনের মেয়ে। ২০১৪ সালের ১২ মে সৌদি আরবে এক অগ্নিকাণ্ডে মো. জাকের হোসেন মারা যান। নাহিমা তখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। আর নাহিমার বড় বোন নাছরিন আক্তার দশম শ্রেণিতে পড়ত। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির আকস্মিক মৃত্যুতে পুরো পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে। নাহিমার মা অনেক কষ্টে দুই মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যান। তবে নাহিমা আর নাছরিনের পাশে বরাবরই ছিলেন তাদের স্কুলের শিক্ষকেরা। বিনা টাকায় তাদের দুই বোনকে প্রাইভেট পড়িয়েছেন।
ছোটবেলা থেকে নাহিমা পড়াশোনায় আগ্রহী। পঞ্চম শ্রেণিতে মেধাবৃত্তি পেয়েছে সে। জেএসসি পরীক্ষাতেও নাহিমা জিপিএ-৫ পেয়েছে। পড়াশোনার খরচ জোগাতে সপ্তম শ্রেণি থেকে বাড়ির পাশের শিশুদের পড়িয়েছে নাহিমা। টিউশনির টাকা দিয়ে নাহিমা নিজের পড়াশোনার খরচ চালায়। এ ছাড়া অষ্টম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হোসেন বিনা টাকায় নাহিমাকে প্রাইভেট পড়াতেন। তবে এখন কলেজে পড়াশোনার খরচ কীভাবে জোগাড় হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে নাহিমার পরিবার।
নাহিমা বলে, এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদনে তার প্রথম পছন্দ ছিল ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজ। সেখানেই সে ভর্তির সুযোগও পেয়েছে। কিন্তু পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে কলেজে পড়া হবে কি না, সেটা জানে না নাহিমা।
নাহিমার বাবা সৌদি আরব প্রবাসী ছিলেন। প্রবাসে থাকাকালে গ্রামে ৬ শতাংশ জমি কিনেছিলেন তিনি। এ ছাড়া আর কোনো সম্পত্তি নেই নাহিমাদের। গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নাহিমা আর তার মা থাকেন। নাহিমার মা হাসিনা বেগম বাড়িতে কিছু হাঁস-মুরগি পালন করেন। এ ছাড়া এলাকাবাসীর সহযোগিতায় কোনোরকমে দিন পার করছেন তাঁরা।
হাসিনা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী ৬ শতাংশ জমি কিনেছিলেন। তবে ওই জমিতে ঘর করার মতো সামর্থ্য নেই তাঁদের। স্বামীর মৃত্যুর আগ থেকেই দুই মেয়েকে নিয়ে প্রতিবেশী এক ব্যক্তির পরিত্যক্ত বাড়িতে থাকেন। স্বামীর ভিটায় একটা ঘর তুলে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে কয়েক বছর আগে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। অনেক কষ্টে মেয়েদের পড়াশোনা করিয়েছেন। এর মধ্যে বড় মেয়ে নাছরিনের বিয়ে দিয়েছেন। নাছরিন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিংয়ে ডিপ্লোমা করেছেন। কিন্তু ছোট মেয়েকে কত দূর পড়াতে পারবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।
শের-ই-বাংলা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, নাহিমা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। ছোট বয়সেই সে বাবাকে হারিয়েছে। তবে তার মা অনেক কষ্টে তাকে পড়াশোনা করাচ্ছেন। এ জন্য তিনি নাহিমাকে বিদ্যালয় থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। নাহিমার মতো মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।