চাটখিল ইউএনও’র মানবিকতায় মাহির নতুন জীবন

Date:

মোহাম্মদ আমান উল্যা, চাটখিল (নোয়াখালী) প্রতিনিধি :: চাটখিল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়ার চেষ্টা ও আন্তরিকতায় পাল্টে গেছে হকার আবু সালেহ মাহির (১৫) জীবন। মাহি উপজেলার পরকোট ইউনিয়নের পূর্বশোশালিয়া গ্রামের আব্দুল কাদের লালনের ছেলে। এক সময় মাহির যে হাতে ছিল সংবাদপত্র বর্তমানে সে হাতে উঠেছে কলম খাতা। পরকোট ইউনিয়নের দশঘরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের ছাত্র তিনি।

ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মায়ের মৃত্যুর পর মাহির জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। মায়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন তার বাবা। ২০১৯ সালে এক দুর্ঘটনায় মাহির বাবা ঘরবন্দী হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে করোনা মহামারির সময় স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে অভাবের তাড়নায় মাহি কিছুদিন টাইলসের কাজ করেন। সেখানে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে পত্রিকার হকারের পেশায় যোগ দেন তিনি। একদিন পত্রিকা দিতে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া তার পেশা সম্পর্কে জানতে চান।

পড়াশোনার ইচ্ছা আছে কিনা জানতে চাইলে মাহি জানায়, আমারও ইচ্ছে করে বই নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কিন্তু বাবার আয় নেই, আমার আয় দিয়েই সংসার চলে। তারপর মাহির সংসার ও পড়াশোনার দায়িত্ব নেন চাটখিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া।

আবু সালেহ মাহি জানান, আমার মা নেই। বাবা নিরুপায় হয়ে আমাকে কাজে দিয়েছেন। আমি প্রতিদিন পত্রিকা দিতে ইউএনও স্যারের অফিসে যেতাম। ইউএনও স্যারের মনে দয়া হয়েছে। তাই আমার পড়াশোনা ও সংসারের দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন। স্যারের প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। আমি মানুষের মতো মানুষ হতে চাই, বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই। একজন আদর্শ শিক্ষক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই।

মাহির বাবা বলেন, ইউএনও স্যার অনেক ভালো মানুষ। আমার সন্তানের প্রতি তিনি যে দায়িত্ব পালন করেছেন সেটি মূলত বাবা হিসেবে আমার পালন করার কথা ছিল কিন্তু অভাবের কারণে আমি সেই দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। ইউএনও স্যারের এ ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতে পারব না।

চাটখিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমি চাটখিল উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই দেখতে পেতাম মাহি নামের ছোট্ট ছেলে আমাকে পত্রিকা দিতে আসতো। সে এখানকার প্রেসক্লাবের হকার ছিল। এক দুই দিন আসার পর ছেলেটার চোখে আমি মেধা ও সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছি। আমি তার থেকে খবর নেই জানতে পারি তার বাবা শারিরীকভাবে অক্ষম ফলে তার আয় দিয়েই সংসার চলে। তারপর তার স্কুলের শিক্ষকের সাথে কথা বলে পড়ার ব্যবস্থা করে দেই।

তিনি আরও জানান, আমি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে তাকে মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে দেই। অনেকেই মাহিকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। বছরের শুরুতে একটি সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে স্কুলের ব্যাগ, জুতো, বইয়ের ব্যবস্থা করি। বর্তমানে তাকে চার হাজার টাকা করে দেই।

সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইউএনও বলেন, মাহি আমার ছোট ভাইয়ের মতো। আমাদের আশপাশে অনেক মাহি আছেন যারা একটু সুযোগের অভাবে পড়াশোনা করতে পারছেন না। বিত্তবান যারা আছেন তারা যদি এসব মাহির পাশে সহানুভূতি নিয়ে তাকাই তাহলে অনেকের জীবন বদলে যেতে পারে। এতে খুব বেশি খরচ হবে না কিন্তু শিক্ষার মতো একটি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না।

নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম বলেন, নতুন প্রজন্মের যারা ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষ। তাদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিল, দাদা মুক্তিযোদ্ধা ছিল অথবা নানা মুক্তিযোদ্ধা ছিল। তার ভেতরে মানবিকতা মূল্যবোধ আছে বলেই তারা এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। আসলে মন থেকে না এলে এমন কাজ করা যায় না। তিনি আমাকে বিষয়টি শেয়ার করেছেন আমি বলেছি আপনি যেখানে ঠেকে যাবেন আমাকে জানাবেন। আমি সার্বিক সহযোগিতা করব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

Popular

More like this
Related

আগরতলায় বাংলাদেশের হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় যা বললেন আসিফ নজরুল

টাইম আন্তর্জাতিক ডেস্ক :ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা...

বাংলাদেশকে বিজেপি ও বিধানসভার বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর হুমকি

টাইম ডেস্ক :পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি নেতা ও বিধানসভার বিরোধী নেতা...

নোয়াখালীতে মৎস্য চাষ প্রশিক্ষণ উদ্ধোধন

নোয়াখালী প্রতিনিধি : ‘দক্ষ যুব গড়ছে দেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ’ এই...