কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি :: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভা ৭নং ওয়ার্ডের রিক্তা টিকটকের দংশনে নিকৃষ্ট পথ বেছে নিয়েছেন। তার আত্মহত্যার সিদ্ধান্তে শিশু ফারাবির ভবিষ্যৎ অনামিশা। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক নানা কাহিনি। গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে আসে অশ্লীল ছবি, ভিডিও, অডিওসহ টিকটকের নানা চিত্র।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভয়াবহ টিকটক হয়ে ওঠেন রিক্তা। এরই কুফলে একাধিক স্বামী পরিবর্তন করেন তিনি। প্রথমে বিয়ে হয়েছিল উপজেলার মুছাপুরের মঞ্জু নামের এক যুবকের সঙ্গে। বিয়ের পর পরিচয় হয় লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ পশ্চিম লতিফ পুরের আরেক টিকটকার ফয়সল মাহমুদের সঙ্গে। টিকটকার ফয়সলের প্রলুব্ধ ও প্ররোচনায় পড়ে স্বামী মঞ্জুর সঙ্গে রিক্তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরই মধ্যে পরিবারের অমতে পালিয়ে গিয়ে রিক্তা ও ফয়সল বিয়ে করেন।
ফয়সাল রিক্তাকে দিয়ে টিকটকের মাধ্যমে প্রবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আয়ের পথ বেছে নেন। একই সাথে রিক্তার সাবেক স্বামী মঞ্জুর কাছ থেকে পাওয়া দেনমোহরের পাঁচ লাখ টাকা ফয়সালকে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। এতে রিক্তা সায় না দেওয়ায় তার জীবন হয়ে যায় দুর্বিষহ। স্বামী ফয়সাল, শাশুড়ি তাসলিমা ও ননদ পিংকির অত্যাচারে নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে রিক্তা। এরই মধ্যে নরসিংদী জেলার দুবাই প্রবাসী ইমনের সঙ্গে টিকটকে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এটা জানাজানি হলে রিক্তার জীবনে নেমে আসে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ীর নির্যাতন।
এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, টিকটকার প্রবাসী ইমনকে সঙ্গী করতে বাদসাধে শিশু ফারাবি। ইমনের বাবা সন্তানসহ রিক্তাকে মেনে নিতে অপারগ। রিক্তার সন্তান ফারাবির জন্মের আগেই নামটি রেখেছিলেন ইমন। স্বামী না হয়েও প্রতি মাসে রিক্তার হাত খরচের জন্য টাকা পাঠাতেন ইমন।
গত শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বসুরহাটে বাবার বাড়ির একটি কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন রিক্তা। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে, জব্দ করে রিক্তার মোবাইল ফোন। এ ঘটনায় রিক্তার বাবা আবু নাছের বাদী হয়ে স্বামী ফয়সাল মাহমুদ, শাশুড়ি তাছলিমা বেগম ও ননদ পিংকিকে আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেন। রিক্তার স্বামী ফয়সালকে শনিবার রাতে লক্ষীপুর তার গ্রামের বাড়ি থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়।
গলায় ফাঁস দেওয়ার আগে রিক্তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে তার মৃত্যুর জন্য স্বামী ফয়সাল মাহমুদ, শাশুড়ি তাসলিমা বেগম ও ননদ পিংকিকে দায়ী করেন। মা-বাবাকে আকুতি করে রিক্তা জানান, তার শিশু ছেলে ফারাবি ইসলামকে তার বাবা ফয়সালকে যেন না দেয়। নানার বাড়িতেই যেন শিশু ফারাবির আশ্রয় হয়। ৮ মাস বয়সের ছেলে ফারাবির বাবা কারাগারে, মা রিক্তা আত্মহত্যা করায় ভবিষ্যৎ অনামিশা হতে পারে বলে এলাকার মানুষ ধারণা করছে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী বলেন, টিকটকের কারণে এ আত্মহত্যাটি ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবুও প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।