‘ধানমণ্ডি ৩২ নাম্বার থেকে প্রত্যান্ত অঞ্চল’ ছিলো রাতভর সারাদেশে ভাঙচুর-আগুন

Date:

এএইচএম মান্নান মুন্না:
বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হলো শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি। বুধবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বিক্ষুদ্ধ ছাত্রজনতা বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু করেন। এর আগে বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুদ্ধরা। এ সময় বাড়িটিতে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এই ঘটনায় রাতভর দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

আজ (৬ ফেব্রুয়ারি) বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে শেখ হাসিনার বক্তব্যকে ঘিরে বুধবার রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। যার অংশ হিসেবেই দেশের বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা শেখ মুজিব-শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন স্থাপনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।

রাজধানী:
রাতভর এই কর্মকাণ্ডে হাজারো বিক্ষোভকারী শেখ মুজিবুর রহমানের, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত বাসভবনে হামলা চালিয়ে সেটি ভেঙে ফেলেছে।

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার ৫ নম্বর সড়কে অবস্থিত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বাসভবন সুধাসদনে আগুন দিয়েছে ছাত্র-জনতা। বাদ যায়নি আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পাড়ায় অবস্থিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল’ থেকে শেখ মুজিবের নাম মুছে ফেলেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলের উদ্বোধনের সময় লেখা শেখ হাসিনার নামও মুছে ফেলেছে শিক্ষার্থীরা।

চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রামে নগরীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের ছবি সংবলিত ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে ছাত্র-জনতা। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে নগরীর জামালখান মোড়ে দেয়ালে স্থাপন করা এসব ম্যুরাল ভাঙচুর করে ছাত্রজনতা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের সামনে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য নির্মিত নৌকা ভাঙার সময় হলের গেট লাগিয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা তালা ভেঙে বের হয়ে ভাঙচুরে বাঁধা প্রদান করলে একসময় ছাত্ররা ইট পাটকেল ছুড়ে মারে তাদের দিকে। বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা তখন ছাত্রদের ধাওয়া ও হামলা করে। এ সময় একজন ছাত্র গুরুতর আহত হয় বলে জানা গেছে।

হলের সামনে ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ ছাত্রীরা এক পর্যায়ে ভিসি বাংলোর সামনে চলে আসে
হলের সামনে ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ ছাত্রীরা এক পর্যায়ে ভিসি বাংলোর সামনে চলে আসে এবং প্রশাসনের দায়িত্বহীনতার অভিযোগে হট্টগোল করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আসা সহকারী প্রক্টর কোরবান আলী খানের সাথে ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একজন কোরবান আলী খানের ঘাড়ে ও মুখে আঘাত করে।

নোয়াখালী:
ওবায়দুল কাদের’র ছোট ভাই কাদের মির্জা ও শাহাদাত’র বাড়ীতে হামলা ভাংচুর- অগ্নিসংযোগ
গণভবন স্টাইলে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের গ্রামের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে যে,যা হাতের কাছে পেয়েছেন তা নিয়ে গেছেন ছাত্র জনতা।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টা থেকে দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলা শাখার সমন্বয়কদের নেতৃত্বে
এ হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ চালায় ছাত্র-জনতা। 

বাংলাদেশ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান শেখ হাসিনার সরকার ৬ মাস পূর্ণ হয় গত বুধবার। এর মধ্যে হঠাৎ আওয়ামী লীগ ঘোষণা দেয়,এ দিন রাত ৯ টায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে পেজে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠান ভাষণ দিবেন ক্ষমতাচুত্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।যিনি ৫ আগষ্টের পর থেকে ভারতে অবস্থান করেছেন। তার সেই ভাষণ দেয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। সেই ক্ষোভের আগুন বিদ্যুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে । তারই অংশহিসেবে ৫ ফেব্রুয়ারি ৩২ নাম্বার বাড়ী অগ্নিসংযোগ করার খবর শোনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে থাকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নোয়াখালী জেলার সমন্বয়করা।
পরদিন ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১ টা থেকে কেউ ট্রাকে করে, কেউ মিছিল নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বড় রাজাপুর গ্রামের মিয়া বাড়িতে এসে হামলা চালায় ছাত্র-জনতা। পরে সেখানে ওবায়দুল কাদেরের কোন বাড়ী – ঘর না থাকলে ও তাঁর ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার বাড়ী, শাহাদাত হোসেন এর বাড়ী বুলডোজার না পাওয়ায় দোতলা ভবন হাতুড়ি-শাবল দিয়ে ভাঙা শুরু করে।

এর আগে গত ৫ আগস্ট বিকেলে ওই বাড়ির পাঁচটি বসতঘর ও জ্বালিয়ে দেয়া দুটি গাড়ি। দ্বিতীয় বারের মতো আবারও গাড়ি গুলি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।অপর দিকে শাহাদাত হোসেন এর বাড়ীতে হামলা শেষে তার বাড়ীর সামনে চৌচালা একটি টিন সেট ঘরে অগ্নিসংযোগ করে।

স্থানীয় বাসিন্দা এমরান হোসেন বলেন, ৫ আগস্টের পর কিছু দিন কাদের মির্জা ভবনটি পুনরায় সংস্কার করেন। দ্বিতীয় দফায় কাদেরের বাড়িতে এ অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। তবে হামলা ভাঙচুরের সময় তাদের পরিবারের কেউ ছিল না। ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর কাদেরের পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে রয়েছেন। 

ঘটনাস্থলে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলা শাখার সমন্বয়ক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ছাত্র-জনতা কোম্পানীগঞ্জের অসংখ্য মানুষ ওবায়দুল কাদের ও তার ভাই আব্দুল কাদের মির্জার এবং তার বাহিনীর লোকদের দ্বারা অত্যাচার, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এসব কারণে তাদের প্রতি যে ক্ষোভ জমেছিল, আজকের হামলা ভাঙচুর ওই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এই হামলা ভাঙচুরে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা অংশগ্রহণ করেছে।

তিনি আরও বলেন, দেশের বড় বড় প্রজেক্টের টাকা এ বাড়িতে ভাগ বাটোয়ারা হতো। এখানে বসে খুনের পরিকল্পনা হতো। তাই পলাতক ওবায়দুল কাদের , কাদের মির্জা ও শাহাদাতের সেই আস্তানার চিহ্ন মুছে দিতে এ হামলা চালানো হয়।  ভবিষ্যতেও যদি কোনো সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে ফ্যাসিস্টের আচরণ করেন, তাদের পরিণতিও একই রকম হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নোয়াখালীর মুখপাত্র ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ৫ আগস্ট এই বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালিয়েছে। তারপর কে বা কারা যেন বাড়িটি সংস্কার করেছে। আমরা বুলডোজার দিয়ে বাড়িটা ভেঙে দিতে চাই। ক্রমন্বয়ে যারা স্বৈরাচারী ছিলেন তাদের সবার বাড়িঘর ভেঙে দেওয়া হবে।

তবে,ঘটনার সময়ে কোন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সদস্যকে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিমকে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। 
*বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার দেওয়া আগুনে নোয়াখালীর হাতিয়ায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মোহাম্মদ আলীর বসতঘর, স্পিডবোট, ট্রলার সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঘটনার সময় অথবা পরবর্তীতেও এগিয়ে আসেনি ফায়ার সার্ভিস। এতে অন্তত অর্ধশত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতভর হাতিয়া পৌরসভার লক্ষ্মীদিয়া এবং ব্রিকফিল্ড বাজার এলাকার দুইটি বাড়ি ছাড়াও সাতটি স্পিডবোট এবং চারটি ট্রলারে ভাঙচুরের পর আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাতে লক্ষ্মীদিয়ার দুটি দোকানেও ভাঙচুর করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অগ্নিকাণ্ডে কঙ্কালসার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভবনগুলো। পুড়ে ছাই হয়ে আছে বসতঘরের আসবাবপত্র। কোথাও কোথাও ধোয়ার কুণ্ডলি দেখা যাচ্ছে। ট্রলার ও স্পিডবোট পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
জানা যায়, গত বছরের ১০ আগস্ট রাত ৩টার দিকে উপজেলার ওছখালীর নিজ বাসভবন থেকে মোহাম্মদ আলী, তার স্ত্রী সাবেক এমপি আয়েশা ফেরদাউস ও তাদের বড় ছেলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক আলী অমিকে হেফাজতে নেয় নৌবাহিনী। তারপর ১২ আগস্ট থেকে স্ত্রী-ছেলেসহ কারাগারে আছেন হাতিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর হাতিয়া পৌরসভার লক্ষ্মীদিয়া ও ব্রিকফিল্ড বাজার এলাকায় দুটি বাড়ি, হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে নোঙর করা সাতটি স্পিডবোট ও চারটি ট্রলারে আগুন দেওয়া হয়। পরে লক্ষ্মীদিয়ার দুটি দোকানেও ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কিছু লোক মিছিল নিয়ে মোহাম্মদ আলীর লক্ষ্মীদিয়ার বাড়ির সামনে যান। এ সময় মোহাম্মদ আলীর অনুসারীদের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে মিছিলে থাকা তিনজন আহত হন।
এ ঘটনার জেরে রাত দেড়টার দিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে কয়েকশ মানুষ সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর দুটি বাড়িতে হামলা চালায়। ভাঙচুরের পর দুটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। একই সময়ে নলচিরা ঘাটে মোহাম্মদ আলীর সাতটি স্পিডবোট এবং চারটি পণ্য ও যাত্রীবাহী ট্রলারে আগুন দেওয়া হয়।

আগুনে ছাই হয়ে যাওয়া মোহাম্মদ আলীর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বাকের মাঝি বলেন, সব পুড়ে ছাই হয়ে আছে। কোথাও কেউ নেই। ভেতরে ধোঁয়ার জন্য যাওয়া যায় না। সেখানে বসে মোহাম্মদ আলী সালিস করতেন সেই গোলঘরও পুড়ে ছাই। এত আগুন ফায়ার সার্ভিস ছাড়া নেভানো সম্ভব নয়। এক রাতের ব্যবধানে সব মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।

গোলাম মাওলা নামে মোহাম্মদ আলীর এক অনুসারী বলেন, রাতে ছাত্রদের মিছিল থেকে প্রথমে মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে এক দফা হামলা হয়েছিল। পরে আবার রাতে দ্বিতীয় দফায় দুটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া সাতটি স্পিডবোট ও চারটি ট্রলারেও আগুন দেওয়া হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রদের হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার সুযোগে বাড়ি দুটিতে ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসকে অবহিত করার পরও কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।

মোহাম্মদ আলীর ছোট ছেলে মাহতাব আলী অদ্রি বলেন, আমার বাবা-মা-ভাই জেলে আছেন। আমাদের দুটি বাড়িতে কেউই থাকেন না। ছাত্র-জনতার আগুনে অন্তত ৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের পরিবারের সবাই জেলে থাকার পরও আমাদের বাড়িতে এভাবে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-লুটপাটের ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।

ফায়ার সার্ভিসের হাতিয়া স্টেশনের সেকেন্ড লিডার হারুনুর রশিদ বলেন, রাতে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর আমাদের ফোনে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। কিন্তু আমরা পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও পাইনি। তাই নিরাপত্তাহীনতার কারণে আগুন নেভাতে যেতে পারিনি।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা বলেন, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে আমাদের ঘটনাস্থলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না।

  • নোয়াখালীতে সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের গ্রামের বাড়ি ও সাবেক পৌর মেয়র বাড়ীতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ
    এএইচএম মান্নান মুন্না :
    নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার আলীপুর এলাকায় সাবেক সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদের গ্রামের বাড়িতে তাঁর ছোট ভাইয়ের বাসভবনে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের গ্রামের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আক্তার হোসেনের বাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়।

বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক আটটার দিকে এসব ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের পৃথক দুটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

তবে এই হামলা-ভাঙচুর কিংবা অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নোয়াখালী জেলা শাখার আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, চৌমুহনীর ঘটনাটি সেখানকার স্থানীয় রাজনৈতিক ঘটনা। এর সঙ্গে ছাত্রদের কোনো সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া ছাত্রদের কর্মসূচি ছিল বৃহস্পতিবার দিনের বেলায়।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে শতাধিক কিশোর-তরুণ ও যুবক লাঠিসোঁটা নিয়ে সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভার আলীপুর গ্রামের বাড়িতে হামলা চালান। হামলাকারীরা সাবেক সেনাপ্রধানের ছোট ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি জাবেদ ইউ আহমেদের দ্বিতল বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালান এবং ড্রয়িংরুমের সোফায় আগুন ধরিয়ে দেন।

প্রায় একই সময় একই ব্যক্তিরা পাশের চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আক্তার হোসেন ওরফে ফয়সলের বাড়িতেও হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছেন। স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, হামলাকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের মাথায় হেলমেট ও মাস্ক ছিল। তবে হামলা-ভাঙচুরের সময় উভয় বাড়িতে কেউ ছিলেন না।

খবর পেয়ে বেগমগঞ্জ থানার পুলিশ ও নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে হামলাকারীদের কাউকে পাননি। এ ঘটনার পর রাতে চৌমুহনী পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে টহল দিতে দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের গ্রামের বাড়িতে তাঁর ছোট ভাই জাবেদ ইউ আহমেদের দ্বিতল ভবনে একদল লোক সন্ধ্যার পর হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছেন। তারা এ সময় নিচতলার সোফায় আগুন ধরিয়ে দেয় এবং কিছু মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া একই সময় সাবেক পৌর মেয়র ফয়সলের বাড়িতেও কিছুটা হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তবে হামলাকালে বাড়ি দুটিতে বাসিন্দাদের কেউ ছিলেন না।

কুমিল্লা:
কুমিল্লায় সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিক্ষুব্ধরা পেট্রল ঢেলে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন।

এর আগে রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরের রামঘাট এলাকায় অবস্থিত কুমিল্লা মহানগর ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুরের চেষ্টা চালানো হয়। বিক্ষুব্ধরা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থাকা ইটের গাঁথুনি ভেঙে ফেলেন।

বরিশাল:
বরিশালে সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তার আগে সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে শেখ হাসিনার ভাগ্নে ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর নগরীর কালীবাড়ি রোডের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। বরিশালের সেরনিয়াবাত ভবন এখন ধ্বংসস্তূপ।

কুষ্টিয়া:
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক এমপি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের আলিশান বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এক্সকাভেটর দিয়ে বাড়ির গেট ও দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার পরে শহরের পিটিআই সড়কের বাড়ির সামনে ছাত্র-জনতা অবস্থান নিয়ে ভাঙচুর শুরু করে।

সেখান থেকে মিছিল নিয়ে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ সদর উদ্দিন খানের শহরের কদমতলার বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়।

ভোলা:
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ভোলা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের বাসভবনে আগুন দেওয়া দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

রাত ১টার দিকে ভোলা সদরের গাজীপুর রোডে অবস্থিত তোফায়েল আহমেদের ‘প্রিয় কুটির’ নামের বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

খুলনা:
খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ‘শেখ বাড়ি’ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর অগ্নিসংযোগ করেছে ছাত্র-জনতা। মধ্যরাতে বাড়ির ভেতরের অংশে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। অন্যদিকে, রিকশা-ভ্যানসহ বিভিন্ন বাহনে করে ওই বাড়ির ইট ও রড খুলে নিয়ে যাওয়ার চিত্রও দেখা যায়।

শেখ হাসিনার পাঁচ চাচাতো ভাই যথাক্রমে শেখ হেলাল উদ্দিন, সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, শেখ সোহেল উদ্দিন, শেখ শাহ জালাল রুবেল ও শেখ বেলাল উদ্দিন। এর মধ্যে শেখ হেলাল ও শেখ জুয়েল যথাক্রমে বাগেরহাট-২ ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। আরেকজন সংসদ সদস্য ছিলেন শেখ হেলাল উদ্দিনের ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময়। ওই বাড়ি থেকেই মূলত: পদ্মার এপারের আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হতো।

চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গায় শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ম্যুরাল, বিভিন্ন স্থাপনা ও জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এসময় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় ম্যুরালের স্থাপনা। আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ভবনের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর চালানো হয়।

বুধবার ( ৫ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা এ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন।

নাটোর:
নাটোরের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম শিমুলের কান্দিভিটা জান্নাতি প্যালেসে নতুন করে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

সিলেট:
সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা বুলডোজারসহ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে গিয়ে ম্যুরাল ভাঙার সূচনা করে।

পাবনা:
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আলহাজ মোড় বিজয় স্তম্ভের পাশে নির্মিত ঘৃণা স্তম্ভ ভাঙচুর করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা:
সাতক্ষীরা শহরের খুলনা মোড়স্থ শহীদ আসিফ চত্বরের শেখ মুজিবের ভাস্কর্য ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নানা স্লোগান দিয়ে সেখানে জড়ো হয়। তারা আগে থেকেই অর্ধ ভাঙা অবস্থায় থাকা ম্যুরালটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলে।

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নামাঙ্কিত স্থাপনার নাম পরিবর্তন ও ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল’ করা হয়েছে। এছাড়াও বিজয় ৭১ ও অমর একুশে হলের নামফলক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে হাসিনার নাম।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, নামফলক ভেঙে ফেলা হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নামে থাকা হলগুলোর নাম বদলে নতুন নামকরণ করা হয়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ হাসিনার ছবিতে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি পালন করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ম্যুরাল অপসারণ করা হয়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল গুঁড়িয়ে ফেলা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

Popular

More like this
Related

কোম্পানীগঞ্জে পুত্রবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে শশুর গ্রেফতার

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি :: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় শ্বশুরের বিরুদ্ধে...

ব‍্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ’র কবর জিয়ারত করেন বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলাম

কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি:সাবেক প্রধানমন্ত্রী, উপরাষ্ট্রপতি, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস‍্য, ব‍্যারিস্টার...

যারা দলের ব্যানারে চাঁদাবাজি ও পদ বাণিজ্য করে তাদের সাথে আওয়ামী লীগের পার্থক্য নেই! -ফখরুল ইসলাম

এএইচএম মান্নান মুন্না :নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির...

কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামীলীগ গত ১৭ বছরে বিএনপিকে ইফতার মাহফিল করতে দেয়নি -ফখরুল ইসলাম

এএইচএম মান্নান মুন্না :নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি'র আহ্বায়ক কমিটির...