নোয়াখালীতে মাদরাসায় খাবার খেয়ে এক ছাত্রের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৭

Date:

সদর (নোয়াখালী) সংবাদদাতা :: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ৭নং একলাশপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের পূর্ব একলাশপুর গ্রামের মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদরাসা কমপ্লেক্স ও এতিমখানায় রাতের খাবার খেয়ে নুর হাদী নিশান (৯) নামে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও ১৭ ছাত্রকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের সবার বয়স ৯-১০ বছরের মধ্যে। সোমবার (২ আগস্ট) রাত পৌনে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

ধারণা করা হচ্ছে, রাতের খাবার খেয়ে বিষক্রিয়ায় ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাদরাসার ছয় শিক্ষককে আটক করা হয়েছে। নিহত নুর হাদী নিশান বেগমগঞ্জ উপজেলার ৭নং একলাশপুর ইউনিয়নের পূর্ব একলাশপুর গ্রামের আনোয়ার মিয়ার ছেলে। সে মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার নূরানী বিভাগের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) দুপুর ১২টায় বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান সিকদার জানান, খাবারের সঙ্গে কোনো বিষাক্ত পদার্থ মেশানো হয়েছে কি না তা তদন্ত করতে বাকি খাবার জব্দ করা হয়েছে। তদন্তের পর ঘটনার আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই মাদরাসায় মোট শিক্ষার্থী ১২০ জন। প্রথম ধাপে ১৮ জন রাতের খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বাকিরা খাবার খায়নি। মাদরাসার মোট ৭০ শিক্ষার্থী দৈনিক খাবার খায়। অসুস্থদের বরাত দিয়ে স্থানীয়রা আরও জানান, মাংসে একটু গন্ধ ছিল। অসুস্থদের মধ্যে নিশান মাদরাসাতেই মারা যায়।

মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক ইসমাইল হোসেন বলেন, সোমবার দুপুরে মাদরাসায় মাংস রান্না হয়। এরপর এশার নামাজের পরে আবাসিক বিভাগের ২০ ছাত্র ওই মাংস দিয়ে রাতের খাবার খায়। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ১৮ ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়ে। সবারই পেটে ব্যথা এবং বমি ছিল।

অসুস্থদের সঙ্গে আসা মাদরাসার এক শিক্ষার্থী বলেন, নুরানির ছাত্ররা যখন ভাত খাচ্ছিল, তখন আমরা নামাজ পড়ছিলাম। তাদের চিৎকার শুনে আমরা এসে দেখি সবাই বমি করছে। গরুর মাংসগুলো একসঙ্গে দুপুরে রান্না করে আলাদা দুইভাগ করে রাখা ছিল। দুপুরে খাওয়ার পর কারও সমস্যা হয়নি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান বলেন, মাদরাসার অধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানতে পারি। রাতে বাচ্চাদের গরুর মাংস দেয়া হয়, যা দুপুরেও তারা খেয়েছিল। অসুস্থের পর একজন পল্লী চিকিৎসককে মাদরাসায় ডেকে আনা হয়। পরবর্তীতে তার পরামর্শে অসুস্থ ১৮ ছাত্রকে কয়েক ধাপে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজিম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে ছাত্ররা অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থদের মধ্যে নিশান নামে এক ছাত্রকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। বাকি ১৭ ছাত্র ভর্তি রয়েছে।

খবর পেয়ে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. খোরশেদ আলম খান ও সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার রাতেই হাসপাতালে গিয়ে শিশুদের খোঁজ খবর নেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

Popular

More like this
Related

৭১ এর ইতিহাস মুছে ফেলা যাবে না- ফজলুর রহমান মুরাদ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল রাজনৈতিক ‘জনযুদ্ধ’। মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি দীর্ঘ...

কোম্পানীগঞ্জে ওবায়দুল কাদেরের ভগ্নিপতিকে কুপিয়ে জখম

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি :: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জেলা পরিষদের...

কোম্পানীগঞ্জে প্রাইভেট ক্লিনিক সমিতির কমিটি গঠন- কুদ্দুস সভাপতি, নুরনবী সম্পাদক

কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি :কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার...

যুক্তরাষ্ট্রে প্রধান উপদেষ্টাকে মুছাপুর রেগুলেটর পুন:নির্মাণের দাবীতে  স্বারক লিপি

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) সংবাদদাতা  :কোম্পানীগঞ্জে  মুছাপুর রেগুলেটর পুন:নির্মাণের দাবীতে অন্তর্বর্তীকালীন...