ফেনী সংবাদদাতা :: ফেনীতে ফেসবুকে লাইভে এসে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন পাষণ্ড এক স্বামী। বুধবার দুপুরে পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বারাহীপুর ভূঁইয়া বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ঘাতক স্বামী ওবায়দুল হক টুটুলকে (৩২) আটক করেছে পুলিশ। তিনি একই এলাকার গোলাম মাওলা ভূঁইয়ার ছেলে।
জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জেরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নারী এক সন্তানের মা ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতি ইউনিয়নের আকদিয়া গ্রামের সাহাবুদ্দিনের মেয়ে তাহমিনা আক্তার।
ফেসবুকে লাইভে এসে ঘাতক টুটুল প্রথমে কিছুক্ষণ কথা বলে নেন। পরে একটি ধারালো দা দিয়ে স্ত্রীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেন। লাইভে এসে টুটুল বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, আমাকে ক্ষমা করে দেবেন, আজকে আমার কারণে আমার পরিবার ধ্বংস। যার কারণে ধ্বংস আজকে তারে আমি এ মুহূর্তে ধ্বংস করে দিলাম। আমি চেষ্টা করছি, অনেক চেষ্টা করছি, পারি নাই।
আল্লাহর ওয়াস্তে সবাই আমাকে মাফ করে দেবেন। আমার এতিম মেয়েটার খেয়াল রাখবেন। আমার ভাইবোনগুলোর খেয়াল রাখিয়েন। আমার পরিবার ভাইবোনগুলোর কোনো দোষ নেই। কেউ এটাতে সম্পৃক্ত না। আমার আজকের এ ঘটনার জন্য আমি সম্পূর্ণ দায়ী।
প্লিজ সবার কাছে আমার একটাই অনুরোধ আমার ভিডিওটা ভাইরাল করেন। যেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়। আর এ ঘটনার জন্য আমিই একমাত্র দায়ী। আর কেউ না।’
এরপর দা হাতে নিয়ে ছুটে গিয়ে কুপিয়ে স্ত্রীকে হত্যা করেন টুটুল। এরপর আবার বলে ওঠেন, ‘আমার পরিবারকে সবসময় ব্ল্যাকমেইল করে। আজ থেকে আর কেউ ব্ল্যাকমেইল করবে না। খোদা হাফেজ। সবাই ভালো থাকবেন।’
এদিকে নিহতের বোন রেহানা আক্তার জানান, ৫ বছর আগে কুমিল্লা জেলার গুণবতী এলাকার আকদিয়া গ্রামের সাহাবুদ্দিনের মেয়ে তাহমিনা আক্তারের সঙ্গে ওবায়দুল হক টুটুলের প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকে আর্থিক অসচ্ছলতা নিয়ে তাদের প্রায় সময় ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো। এরই মধ্যে টুটুল স্ত্রীর পরিবারের কাছ থেকে বেশ কিছু টাকা নেন। কিন্তু আরও টাকার জন্য চাপ দিলে তাহমিনা অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে আজ বুধবার দুপুরে ফেসবুক লাইভে এসে স্বামী টুটুল তার স্ত্রীকে এলোপাতাড়ি দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে টুটুলের ছোট ভাই মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমার ভাবির (তাহমিনা আক্তার) একাধিক পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায় ঝগড়া হতো। বুধবার দুপুরে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হয়। এরপর নিজেদের রুমে ঘুমাতে যান। কিছুক্ষণ পর ঢাকা থেকে এক নিকটাত্মীয় ফোন করে বিষয়টি জানালে আমারা তাদের কক্ষ ভেতর থেকে বন্ধ পাই। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।’
পুলিশ জানায়, হত্যার পর টুটুল নিজেই পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকারীকে গ্রেফতার করে এবং হত্যাকাজে ব্যবহৃত দা ও মোবাইল জব্দ করে। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনীর ২৫০ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ফেনী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সাজেদুল ইসলাম জানান, পারিবারিক কলহের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবু বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই দম্পতির দেড় বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।