বাংলাদেশের রাজনীতি এখনো ১৯৭১ এ আটকে আছে। ২৪ এর অভ্যুত্থান ৭১ প্রশ্নের ফয়সালা করে আগাতে পারেনি। পারলে আজকে ডিবেট হতো রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে, সরকার ৩ মাসে দেশের কি কি পরিবর্তন আনল সেসব নিয়ে, কিন্তু এখন ডিবেটের হট টপিক শেখ মুজিবের ছবি, অভ্যুত্থানে কে কত বড় স্টেকহোল্ডার এসব। এই রাষ্ট্রের চরিত্র দেখে কেও বলবে ৩ মাস আগে এই দেশে একটা গণহত্যা চালানো হইছিল?! কালচারাল পলিটিক্স দিয়ে বাঙালিরে ডিল করতে চাওয়ার এলিট কায়দা বহু পুরনো। কিন্তু এই কথা তো কেও সামনে আনে না যে আওয়ামী লীগ দেশে কালচারাল যুদ্ধ লাগায়ে ১৫ বছর শাসন করছে। বিনিময়ে রাষ্ট্রকে গিলে খাইছে। এই ভগ্ন রাষ্ট্রে যখন জনগণের সামান্য নাগরিক অধিকারগুলো বন্ধ হয়ে গেল তখন জনগণ কোনো প্রকার কালচারাল গোষ্ঠী, কোনো প্রকার রাজনৈতিক বয়ানের তোয়াক্কা না করে সর্বস্ব দিয়ে রাস্তায় নেমে গেল। তাই আমাদের মিছিলে হুজুর- শাহবাগী একসাথে হাঁটছিল সেদিন। কিন্তু অভ্যুত্থান শেষে এখানকার কালচারাল পলিটিক্স আবার প্রধান রাজনৈতিক প্রশ্নে পরিণত হইছে। কেও তো বলল না যে গত ৫৩ বছরে এই ইতিহাসের স্টেক নিয়ে মারামারি কারণে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবেই গড়ে উঠতে পারে নাই?! বাংলাদেশ চরিত্রগত দিক থেকে এখনো শিশুরাষ্ট্রের পর্যায়ে পড়ে। ২৪ এই রাষ্ট্র নিয়ে ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, মজুর, টোকাই, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সকলের মধ্যে নতুন স্বপ্ন তৈরি করছিল। কিন্তু রাষ্ট্ররে গড়ে তোলার ব্যাপারটা এখন মুখ্য প্রশ্ন না। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কাঠামোর দিক থেকে এখনো একটা Failed state। আগের সেই তদবির, ধর্না, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এভাবে নতুন স্বৈরাচারের জন্ম হয়। শাসক আসে, শাসক যায়, রাষ্ট্র আগের জায়গায় পড়ে থাকে।
এদিক সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার- অভ্যুত্থানের আহত, নিহতরা আগের মতো মার্কেটে ‘দাম’ পাচ্ছেন না। তাদের একটা প্রোপার লিস্ট হলো না গত ৩ মাসে। শুরুতেও তাও যা একটু তৎপরতা ছিল। এখন তো আরো কম, আলোচনাও কমে গেছে। এই ইস্যুর মার্কেট ভ্যালু কম। এভাবে অভ্যুত্থানকে মার্কেটে প্রোডাক্টের মতো বেচা-কেনা একটু দৃষ্টিকটু বৈকি। আমি স্টেকহোল্ডার না। আমি ৪ আগস্ট গুলির মুখে পড়েছিলাম কাওরান বাজারে। পাশের এক গলিতে দৌড় দিই তখন। তবে এখন খুব খারাপ লাগে। মরে গেলে ভালো হতো। প্রতিদিন টের পাই। মাঝে মাঝে জীবন মৃত্যুর থেকে অনেক কঠিন। কোনো এক বধ্যভূমিতে সেদিন বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন হওয়াও অনেক সহজ যাত্রা।
ফি আমানিল্লাহ!