হাতিয়ায় পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি’র শিক্ষক-উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

Date:

হাতিয়া (নোয়াখালী) সংবাদদাতা :: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (এসইডিপি) আওতায় স্ট্রেংদেনিং রিডিং হ্যাবিট অ্যান্ড রিডিং স্কিলস অ্যামাং সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস স্কিমের পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় হাতিয়া উপজেলায় শিক্ষক-উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। 

২২ মার্চ বুধবার সকাল ১০.০০ টায় উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে  অনুষ্ঠিত কর্মশালায় হাতিয়া উপজেলার কর্মসূচিভুক্ত মাধ্যমিক পর্যায়ের ৫১টি প্রতিষ্ঠানের  প্রতিষ্ঠান প্রধান ও একজন সহকারী শিক্ষক (লাইব্রেরি ও তথ্য বিজ্ঞান)/সংগঠক অংশগ্রহণ করে। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীগণকে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি এবং কর্মসূচি বাস্তবায়ন বিষয়ে সামগ্রিক ধারণা প্রদান করা হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মোহাম্মদ কায়সার খসরুর সভাপতিত্বে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো: কেফায়েত উল্ল্যাহ্। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এ.কে.এম আমির হোসেন, উপজলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, হাতিয়া। কর্মশালা পরিচালনা করেন পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির সংশ্লিষ্ট টিম ম্যানেজার মাহবুব হাসান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কর্মকর্তাবৃন্দ।  

কর্মশালায় পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির নিম্নোক্ত কার্যক্রমসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয় :

১। স্কিমভুক্ত সকল মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার অনুক‚ল পরিবেশ তৈরি করা; 

২। তাদের বয়স ও মন-উপযোগী সুন্দর সুখপাঠ্য এবং উন্নত মানসম্পন্ন বাংলা ও ইংরেজি বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা; উপজেলা পর্যায়ে উদ্বুদ্ধকরণ ও মূল্যায়ন কর্মশালা আয়োজন করা; 

৩। প্রতিষ্ঠানে বই পড়া ব্যবস্থাপনা তদারকি করা; বই পড়ার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে পুরস্কার প্রদান করা;

৪। প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরির মান উন্নয়নে সহযোগিতা করা; বই পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা;

৫। অনলাইনে বইপড়া কার্যক্রম ও ডিজিটাল লাইব্রেরি তৈরি করা।

পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহের পাঠের মাধ্যমে সকাল ১০.০০টায় ‘উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা’ শুরু হয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার  এ.কে.এম আমির হোসেন কর্মশালার বিষয়বস্তু এবং উদ্দেশ্য তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। বিশেষ অতিথি এ.কে.এম আমির হোসেন বলেন, “পড়িলে বই আলোকিত হই না পড়িলে বই অন্ধকারে রই। তাই বইয়ের মধ্যে লিখিত কালো অক্ষরের জ্ঞান নিজেদের মধ্যে ধারণ করার মাধ্যমে সমাজকে আলোকিত করতে হবে, আমাদের নতুন প্রজন্মকে আলোর পথ দেখাতে হবে। আর সেই দায়িত্ব পালন করবেন আপনারা যারা শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় জড়িত আছেন। আমরা চাই আপনারা নিজ দায়িত্বের বাইরেও আন্তরিকতার সাথে এই দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবেন। এছাড়াও সকল প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের পক্ষ থেকে ও বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের পক্ষ থেকে আজকের এই কর্মশালায় কষ্ট করে উপস্থিত হওয়ার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানান।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি  উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জনাব মো: কেফায়েত উল্ল্যাহ্ বলেন,  “নবী করিম (সাঃ) যেমন সবাই পড়ার জন্য তাগিদ দিয়েছিলেন, জ্ঞান অর্জনের কথা বলেছিলেন তেমনই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রও আমাদের সন্তানদের বই পড়ার জন্য, জ্ঞান আহরণ করার জন্য উৎসাহিত করছে যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমরা চাই আপনারা শিক্ষকগণ এই ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের সন্তানদের সোনার মানুষ হিসেবে গড়া তোলার চেষ্টা করবেন।” তিনি আরোও বলেন “ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে গেছে। মোবাইল  ফোন ও ইন্টারনেট আসক্তি দূর করতে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।”

কর্মশালায় সভাপতি মোহাম্মদ কায়সার খসরু বলেন, বইপড়ার অভ্যাস মানুষকে আলোকিত ও জ্ঞানী মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করে। বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের অপব্যবহারের কারণে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পাঠের অভ্যাস কমেছে। আর এই পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির মাধমে সেটা আমরা ফিরে পেতে পারি আপনাদের সহযোগিতার মাধ্যমে।

অতঃপর কর্মশালার কার্যসূচি অনুযায়ী টিম ম্যানেজার জনাব মাহবুব হাসান সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইডিপি)-এর অন্তর্ভুক্ত স্ট্রেংদেনিং রিডিং হ্যাবিট অ্যান্ড রিডিং স্কিলস অ্যামাং সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস স্কিম-এর আওতায় পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম পরিচিতি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন। 

পরবর্তীতে, ২০২৩ সালে কর্মসূচি বাস্তবায়নের কর্মপরিকল্পনা সভায় উপস্থাপন করেন জনাব মো: সাঈদ হোসনে, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি।

কর্মশালায় উপস্থিত সকলকে একটি করে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির নোট বই, কলম, অনুষ্ঠানসূচি, ২০২৩ সালের কার্যক্রমের কর্মপরিকল্পনা ও পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মুদ্রিত কপি প্রদান করা হয়। কর্মশালা আয়োজনের যাবতীয় ব্যয়ভার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কর্তৃক নির্বাহ করা হয়।

কর্মশালায় সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নরূপ সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করা হয়:

১। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে বইপড়া কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করানোর জন্যে প্রতিষ্ঠান প্রধান সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণকে উদ্বুদ্ধ করবেন। 

২। প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়মিত নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত সংগঠকের কার্যক্রম তদারকি করবেন, প্রতিষ্ঠানের  সকল শিক্ষক/কর্মচারীকে বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করবেন এবং সংগঠককে সহযোগিতা করতে নির্দেশনা প্রদান করবেন।

৩ প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে অন্তত একটি লাইব্রেরি ক্লাস বাধ্যতামূলক করবেন।

৪। প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি পর্যালোচনা, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের বই পড়ায় উৎসাহ দেওয়াসহ প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরি টেকসই ও কার্যকর  করার দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। 

৫। প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমসি সভায় নিয়মিতভাবে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা করবেন এবং সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করবেন।

৬। ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের বইপড়ার বিষয়ে সচেতন করার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে বই লেনদেনের অবস্থা পর্যালোচনা এবং স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে লাইব্রেরি উন্নয়নে ব্যবস্থা নিবেন।  

৭। সংগঠকগণ নিয়মিত বই লেনদেনের মাধ্যমে সকল সদস্যকে শ্রেণীভিত্তিক সব বই পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। 

৮। সংগঠকগণ বই লেনদেনের প্রতিবেদন নিয়মিত বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রে প্রেরণ করবেন এবং তথ্য রেজিস্টারে এর কপি সংরক্ষণ করবেন।

৯। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের সময় পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিষয়েও তদারকি করবেন।

কর্মশালায় পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির বিভিন্ন বিষয়ের উপর দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে দীর্ঘদীন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে যে সকল শিক্ষার্থী ছিটকে পড়েছে তাদের দ্রুত ফেরানো সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই পড়ার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা সভা, বিতর্ক প্রতিযোগীতা, দেয়াল-পত্রিকা তৈরী ইত্যাদির আয়োজন করার পরামর্শ প্রদান করা হয়। ভবিষ্যতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সকল কাজে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে এ মর্মে  প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে কর্মশালার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। তাছাড়া উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় স্কিমভুক্ত ৫১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মধ্যে ৪৭ জন প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ৪৮ জন সংগঠকসহ (সহকারী শিক্ষক/গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান) মোট ৯৫ জন উপস্থিত ছিলেন। জনাব মো: সাঈদ হোসেন, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি, জনাব মো: শারফুল ইসলাম, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি, জনাব মোহাম্মদ সোহেল মাহমুদ, মনিটরিং অফিসার, পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি। এছাড়া রিসোর্স পার্সন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মাহবুব হাসান, টিম ম্যানেজার, পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

Popular

More like this
Related

৭১ এর ইতিহাস মুছে ফেলা যাবে না- ফজলুর রহমান মুরাদ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল রাজনৈতিক ‘জনযুদ্ধ’। মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি দীর্ঘ...

কোম্পানীগঞ্জে ওবায়দুল কাদেরের ভগ্নিপতিকে কুপিয়ে জখম

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি :: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জেলা পরিষদের...

কোম্পানীগঞ্জে প্রাইভেট ক্লিনিক সমিতির কমিটি গঠন- কুদ্দুস সভাপতি, নুরনবী সম্পাদক

কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি :কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার...

যুক্তরাষ্ট্রে প্রধান উপদেষ্টাকে মুছাপুর রেগুলেটর পুন:নির্মাণের দাবীতে  স্বারক লিপি

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) সংবাদদাতা  :কোম্পানীগঞ্জে  মুছাপুর রেগুলেটর পুন:নির্মাণের দাবীতে অন্তর্বর্তীকালীন...