স্বাস্থ্য ডেস্ক :: দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণ ফের বাড়তে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জেলা শহরগুলোতে করোনা পরীক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত নিলেও নোয়াখালীতে কিট ও মেশিন সংকটের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে নোয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, নোয়াখালী সরকারি মেডিকেল কলেজের ল্যাব ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে করোনা পরীক্ষা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকালে সংবাদ মাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, নোয়াখালী সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আনিসুর রহমান ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল।
জানা গেছে, দীর্ঘ ৫ বছর পর দেশে ফের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তবে নোয়াখালীতে করোনার নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ রয়েছে, কারণ স্থানীয় হাসপাতালে পরীক্ষার কীট ও যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়েছে। করোনা মহামারির সময় জেলার ৯টি উপজেলার রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করা হতো নোয়াখালী সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাবে। তবে বর্তমানে সেখানে কীটের অভাবে কোনো ধরনের পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করা গেলে নোয়াখালীতেও সংক্রমণ ধরা পড়বে—এমনটাই ধারণা করছেন অনেকে।
জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ফরিদ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, র্যাপিড অ্যান্টিজেন কিট না থাকায় করোনা পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। ১০ হাজার কিট চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হবে। কিট পেলে পরীক্ষা আবার চালু হবে। আজ সকালে ঢাকায় আমাদের লোক যাবে আজকেই আবার ফিরবে। আশাকরি আজ কিট পেলে কাল থেকে আমরা পরীক্ষা শুরু করতে পারব।
নোয়াখালী সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আনিসুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ল্যাবে স্থাপিত আরটিপিসিআর মেশিন দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় অকেজো হয়ে গেছে। এটি সারাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে টেকনিশিয়ান চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নোয়াখালীসহ দেশের ১৯টি মেডিকেল কলেজে এ অবস্থা বিরাজ করছে। আমরা ইঞ্জিনিয়ারকে আসতে বলেছি। দ্রুতই সারাতে পারলে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারবো।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমাদের যদি নির্দেশ দেওয়া হয় এবং কিট সরবরাহ করা হয়, তাহলে আমাদের পক্ষে পরীক্ষা শুরু করা সম্ভব। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। উপাচার্য মহোদয় নির্দেশনা দিলেই আমরা কাজ করতে পারব।
নোয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মরিয়ম সিমি বলেন, নোয়াখালীতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর কোন তথ্য আমাদের কাছে আসেনি। সরকারি হাসপাতালগুলো কিটের চাহিদা দিয়েছে। সেগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা পেয়ে যাবে।
জেলায় র্যাপিড কিটের সংকট থাকায় করোনা পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। তবে কিট আসলেই পরীক্ষা শুরু হবে। ইতোমধ্যে জেলার ৯ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল, আমাদের ল্যাবরেটরিতে পূর্বে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। পরীক্ষা চলাকালে আমরা যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করি, যাতে কেউ সংক্রমিত না হয়। এছাড়াও আমরা গতবার নোয়াখালী মেডিকেল কলেজকে একটি আরটিপিসিআর মেশিন সরবরাহ করেছি, যাতে এই অঞ্চলের মানুষ দ্রুত ও সহজে করোনা পরীক্ষা করাতে পারে। আমরা সবসময় মানুষের পাশে ছিলাম, এখনো আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব।