ইফতেখার হোসাইন :: ১৫ জুলাই বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় অনন্য প্রতিষ্ঠান নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’।
২০০১ সালের এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক জাতীয় পর্যায়ে নতুন জ্ঞান তৈরি এবং গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে নোয়াখালীতে একটি পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আইন জারি হয়। এরমাধ্যমে সারাদেশের মেধাবী তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে যুযোগপযোগী উচ্চশিক্ষা বিস্তারের নতুন দ্বার উম্মোচিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রালগ্নের দিনটি হলো নোবিপ্রবি’র অতীতের গৌরব-ঐতিহ্যকে বুকে ধারন, বর্তমান সময়ের সাফল্যকে আরো বেগবান করা আর ভবিষ্যতের পথচলার প্রত্যয় নির্ধারণের দিন।
উত্তর-আধুনিক এ যুগে দিবস পালন অনেক আনুষ্ঠানিক রুপরং ও তাৎপর্য পেয়েছে, তাই নোবিপ্রবিও দিনটি উদযাপনে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হৃদ্যতার তাঁতে সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতির বন্ধনে এক হয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে আজ দিনটি পালন করবে। দেশের ২৭তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি সেক্টরে পঞ্চম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এর একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই প্রশাসনের উদ্যোগে নানা আয়োজনে অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত হয়ে আসছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে দেশের উচ্চশিক্ষায় নতুন গতির সঞ্চার করে আসছে। এছাড়াও বহির্বিশ্বের বাজারে একাডেমিক ও গবেষণার ক্ষেত্রে এবং দক্ষ জনবল সরবরাহে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে নোবিপ্রবি। বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. দিদার-উল-আলম এর সুন্দর প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে একাডেমিক ও ভৌত অবকাঠামোসহ সর্বাঙ্গীন কর্মযজ্ঞ অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে চলছে। ১৬ জুন ২০১৯ বিশ্ববিদ্যালযে যোগদান করেন তিনি। যোগদান প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে দাঁডিয়ে বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। আমি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দদের নিয়ে কাজ করবো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের বাংলাদেশ গড়ার নিমিত্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্র ভিত্তিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিবো, একাজে আমি সকলের সহযোগীতা কামনা করি’। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের এদিনে উপাচার্য মহোদয়ের কণ্ঠে ঐক্যতান মিলিয়ে নোবিপ্রবি পরিবারের সংশ্লিষ্ট সকলের প্রত্যয় হোক প্রাণের এ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে উন্নত ও আধুনিক, বিশ্ব র্যাকিংয়ে উচ্চতর আসনে অধিষ্ঠ করতে সবাই সচেস্ট হবো। সর্বোপরি জ্ঞান, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তি সবক্ষেত্রেই বিগত দিনগুলোর অমূল্য ঐতিহ্যকে সামনে নিয়ে আগামীর উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার শপথই হোক আজকের দিনের অঙ্গীকার।
২০০৬ সালে একশ এক একর জায়গায় মাত্র ৪টি নতুন বিভাগ, ১৩ জন শিক্ষক ও ১৮০ জন শিক্ষার্থীকে সাথী করে বিশ্ববিদ্যালয়টি তার পথচলা শুরু করে। সময়ের পালাবদলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও গবেষণার ক্ষেত্রে গুণগত মান যেমন এখন দেশের বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাঝে প্রতিযোগীতামূলক, এখানকার ভৌতকাঠামো উন্নয়নও তেমনি উল্লেখযোগ্য। মাত্র ১৩জন প্রভাষক নিয়ে চালু হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এখন মোট শিক্ষক ৩৫১ জন, এর মধ্যে অর্ধাশতাধিক বিদেশের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমফিল, পিইচডি, পোস্টডক ডিগ্রিধারী। ৬টি অনুষদ ও ২টি ইনস্টিটিউটের অধীন প্রায় ৭৩০১ শিক্ষার্থী এখন গর্বিত নোবিপ্রবিয়ান। শিক্ষাকার্যক্রম শুরু পর থেকেই জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি এখানকার শিক্ষার্থীরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা, দেশের আর্থ-সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রেখে আসছে। এই স্বল্পসময়ের ব্যবধানে হাজারো গ্রাজুয়েট তৈরি করেছে নোবিপ্রবি, যারা আজ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশে রুপ দেয়ার যোগ্য দাবিদার।
নোবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি পররাষ্ট্র, কৃষি, মৎস্য, শিক্ষাসহ অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসমূহে সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। এখানকার শিক্ষার্থীই পৃথিবীখ্যাত মাইক্রোসফটের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় টিমের সদস্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছে। এছাড়াও নোবিপ্রবির ছাত্র-ছাত্রীরা আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কোরিয়া, চিন এবং ইউরোপের নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএস, পিইচডি ও ফেলোসিফ কোর্সে অধ্যায়নরত। শিক্ষার্থীরা যেন বিশ্বের ভালো র্যাকিংয়ের বিশ্ববিদ্যালসমূহে অধ্যায়নের সুযোগ পায় সে বিবেচনায় এশিয়া এবং ইউরোপের ৭টি উন্নত ও আধুনিক বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ‘শিক্ষা সহযোগীতা’ চুক্তি ইতিমধ্যে সম্পাদিত হয়েছে। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বৃত্তি’ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের মাঝে ত্রিশ লক্ষ টাকার ‘বঙ্গবন্ধু সহায়তা ফাণ্ড’ ঘোষণা করা হয়েছে।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ জ্ঞান চর্চা, সৃষ্টি এবং বিতরণ করা। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে গত মাসে চিনে হুনান বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক কার্যকর আলোচনা হয়েছে। এবছরের এপ্রিল মাসে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাপানের উতসোনোমিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষর্থীরা স্নাতক, ও স্নাতোকোত্তর উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই জাপানের উতসোনোমিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবে। পাশাপাশি উতসোনোমিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও নোবিপ্রবিতে অধ্যয়নের সুযোগ পাবে। এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে নোবিপ্রবির পক্ষে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের জন্য বিশ্বখ্যাত জাপানের কুমামোতো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ই নোবিপ্রবির একাধিক শিক্ষার্থী জাপানে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণা কার্যক্রমের কলেবর বৃদ্ধি করতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ৭৭ লক্ষ টাকা করা হয়, এছাড়া বাজেটে বৈজ্ঞানিক ও ল্যাব যন্ত্রপাতি ক্রয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১২ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য ২৬ লক্ষ টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে। গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও ল্যাবরেটরিসমূহের সুযোগ সুবিধার পরিসর বাড়ানো দরুন এখানকার শিক্ষকরা সর্বশেষ গত তিন বছরে ২১০টি মৌলিক গবেষণা সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও প্রায়োগিক জ্ঞান এবং গবেষণাকে সমৃদ্ধ করতে নোবিপ্রবি গ্রন্থাগারে প্রায় ১৬ হাজার বই, ৪৪৬ জার্নাল, ১৩ হাজার ২৯৩ ইলেকট্রনিক বই, ২ লাখ ৫০ হাজার কৃষিভিত্তিক আর্টিকেল, সাড়ে ৩ হাজার প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিষয়ক ইলেক্ট্রনিক জার্নাল সন্নিবেশ করা হয়েছে। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান, গবেষণার উন্নয়নের নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে আজ। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম তাই দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বেও ছড়িয়েছে।
এখানকার শিক্ষার্থীদের আরো দক্ষ করে তৈরি করতে সমকালের শিক্ষাদানের পাশাপাশি মনস্তাত্বিক বিকাশ ও শারীরিক সক্ষমতা অর্জনকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। সে লক্ষ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের হলসমূহে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। বিদ্যমান সাংস্কৃতিক কমিটিগুলোকে উৎসাহিত করে শক্তিশালী করা হয়েছে। জাতীয় পর্যায় থেকেও নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে প্রতিবারই ‘বাংলাদেশ রসায়ন অলিম্পিয়াড ও জাতীয় হাই স্কুল প্রোগ্রামিং কনটেস্ট’ এর আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে শ্রেণিপাঠ ছাড়াও সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। ‘জ্ঞান, শৃঙ্খলা ও একাত্মতা এই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে স্বেচ্ছাসেবামূলক সংগঠন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) নোবিপ্রবি সদস্যরা বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহায়তা করছে। ‘যুক্তিতে মুক্তি’ এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে এগিয়ে নিতে শিক্ষার্থীরা গড়ে তুলেছেন ডিবেটিং সোসাইটি (এনএসটিউডিএস)। ইতোমধ্যে এ সংগঠনের কর্মীরা বিভিন্ন জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বয়ে এনেছেন সম্মাননা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানের বিশ্লেষণী মনন গড়ে তুলতে ছায়া জাতিসংঘ হিসেবে ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করে এনএসটিইউ মডেল ইউনাইটেড ন্যাশন্স এসোসিয়েশন (এনএসটিইউমুনা)। চলতি বছরের ২১ থেকে ২৪ মার্চ এ সংগঠন ‘এনএসটিউমান-২০১৯’ নামের যে সফল সম্মেলনের আয়োজন করে তা নজর কাড়ে সারা দেশের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য গণমাধ্যমে তুলে ধরার প্রয়াসে গড়ে তোলা হয়েছে নোবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি। বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত ব-দ্বীপ রাষ্ট্র বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিক সাফল্য লাভ করলেও বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন হতে পারে এদেশের অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে বড় হুমকি। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে ২০১৫ সালে জন্ম নেয় পরিবেশ বিষয়ক ক্লাব কোস্টাল এনভায়রনমেন্ট ক্লাব (কোয়েন)। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন তা বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছে নোবিপ্রবির ‘লুমিনারি’ নামের সংগঠনটির কর্মীরা। ছুটির দিনগুলোকে এ সংগঠনের কর্মীরা কাজে লাগাচ্ছেন হতদরিদ্র শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে। এছাড়া, কালের কণ্ঠ শুভসংঘ, সমকাল সুহৃদ সমাবেশ, শব্দকুটির, ক্যারিয়ার ক্লাব, ব্লাড সোসাইটি, মশাল, এনএসটিইউ বিজনেস ক্লাব, এনএসটিইউ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক, প্রোগ্রামিং ক্লাব, সাইন্স মেনিয়া, ফার্মা মিরর, বিজ্ঞান বাংলা, টেকনোলজি বেসিক, এপস ফর ফিশারিজ, কোডিং, ইকোনোমিকসবিডি ম্যাগাজিন, ক্যাম্পাস প্রচ্ছদ এর মতো সংগঠনগুলো নানা সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে।
একাডেমিক সাফল্যের পাশাপাশি এতোদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন অনেকদূর এগিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোর আধুনিকায়নে নানামুখী উন্নয়ন উদ্যোগ যেমন- শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম বৃদ্ধি, উন্নতমানের বহুতল একাডেমিক ও গ্রন্থাগার নির্মাণ, সেমিনার রুম, রিডিং রুম, ওয়াইফাই ও ইন্টারনেট সুবিধা, ক্যান্টিন সুবিধা, পরিবহন সুবিধা, ও ল্যাব ফ্যসিলিটি ইতিমধ্যেই বৃদ্ধি করা হয়েছে। একসময় মাত্র দুটি ভবন নিয়ে যে নোবিপ্রবির পথচলা শুরু হয় সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন নির্মিত হচ্ছে সর্ববৃহৎ একাডেমিক ভবন। দশতলা বিশিষ্ট সাড়ে চার লাখ বর্গফুটের এই একাডেমিক কাম ল্যাব ভবন চালু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম পাবে নতুন গতি। নোবিপ্রবির ভৌগলিক অবস্থান নোয়াখালী জেলা শহর থেকে দূরে হওয়ায় ক্যাম্পাসে আবাসিক সংকট রয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরা পেয়েছে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত, নান্দনিক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল, ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হল, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক স্পিকার জনাব আবদুল মালেক উকিল হল এবং হযরত বিবি খাদিজা হল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য আবাসন সংকট নিরসনে ৮০টি ফ্ল্যাটসমৃদ্ধ ১০ তলা টাওয়ার ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। আরো নির্মিত হচ্ছে প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটরদের জন্য ৩০ টি ফ্ল্যাটের ১০ তলা টাওয়ার এবং কর্মচারিদের জন্য ১০ তলা টাওয়ার। যাবতীয় ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের গতি এগিয়ে নিতে বৈদ্যুতিক লাইনসহস ১ হাজার কেবিএ বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও রিভার্স অসমোসিস প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। পরিবহন সংকট নিরসনেও নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ, যা বাস্তবায়িত হওয়ায় বর্তমানে যানবাহনের সংখ্যা পূর্বের চেয়ে বেড়েছে। আরো যানবাহন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে সংযুক্ত হবে অচিরেই। ‘স্বাস্থ্য সেবা অধিকার, শেখ হাসিনার অঙ্গীকার’ এই প্রতিপাদ্য বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য সুলভে উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে নির্মাণ করা হচ্ছে তিন তলা বিশিষ্ট মেডিকেল সেন্টার। নান্দনিক মসজিদ ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য উপসনালয নির্মাণের কাজও চলমান।
সরকারের ২১০০ সাল নাগাদ বাস্তবায়নযোগ্য ‘ডেল্টা প্ল্যান’এ দেশের সম্পদ ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগাবার জন্য উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অদূরে অবস্থিত উপকূলের ৭৭৮একর জমির উপর ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা সমুদ্র বিজ্ঞান ও সমুদ্র সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা নিয়েছে। এছাড়াও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হবে বিজনেস ইনকিউবেটর সমৃদ্ধ পূর্ণাঙ্গ হাইটেক পার্ক। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের শিক্ষাপ্রাতির সুযোগের কথা বিবেচনা করে অচিরেই ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। আজ বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে যে স্বপ্ন দেখা হচ্ছে তা বাস্তবাযনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভূমি স্বল্পতা। তবে ১০১ একরের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন বাড়াতে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা কার্যকর হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের পরিসর বৃদ্ধি পেয়ে নবরুপ লাভ করবে। আশার কথা বর্তমানে মূল ক্যাম্পাসের সঙ্গে আরো ১০২ একর এবং নতুন প্রল্পের জন্য ৪৬১ একর ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।