সমাধান একটাই যুক্তফ্রন্ট

Date:

সেটা হলো ৮০ জনের দলের স্বতন্ত্র অবস্থান চাই– বুর্জোয়া দলগুলোর বিপরীতে নয় শুধু, তাদের বিরুদ্ধেই। অর্থাৎ প্রগতিশীল, গনতান্ত্রিক ও সমাজতন্ত্রীদের ঐক্য চাই, বুর্জোয়া রাজনীতির বিরুদ্ধে। বুর্জোয়া রাজনীতি কেবল সেক্যুলার দলগুলোই যে করে, তা নয়; ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকরাও একই পথের পথিক। তারাও সম্পদের ব্যক্তিমালিকানায় বিশ্বাস করে এবং সমাজতন্ত্রীদের পহেলা নম্বরের শত্রু জ্ঞান করে থাকে। সেক্যুলার বুর্জোয়ারাও সমাজতন্ত্রবিরোধী। তাদের ভাষা কিছুটা ভিন্ন ধরনের; এই যা।

ঐক্য তাই দরকার সমাজ পরিবর্তনের পক্ষের মানুষদের। অর্থাৎ ৮০ জনের ঐক্য ২০ জনের বিরুদ্ধে। এই ঐক্যের লক্ষ্য হওয়া চাই সামাজিক বিপ্লব সম্পন্ন করে পুঁজিবাদ-ফ্যাসিবাদকে স্থায়ীভাবে বিতাড়ন। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঐক্যটা গড়ে উঠতে পারে ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে; প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোর যুক্তফ্রন্ট গঠন করার মধ্য দিয়ে। যুক্তফ্রন্ট আমরা আগেও দেখেছি। যেমন ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট। সেটা ছিল হযবরল ধরনের নির্বাচনী জোট। ওই জোট গঠনে সবচেয়ে উৎসাহী ছিলেন কমিউনিস্টরা। কিন্তু তারাই বাদ পড়ে যান সবার আগে, নেজামে ইসলামের আপত্তির কারণে, যে-পার্টির উদ্ভব ওই জোট গঠন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়েই।

এবারের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনী জোট হবে না। হবে আন্দোলনের যুক্তফ্রন্ট। এই যুক্তফ্রন্ট প্রয়োজনে নির্বাচনে অংশ নেবে, যাতে জনসংযোগ, আদর্শ প্রচার এবং সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করা যায় সেই লক্ষ্যে। যুক্তফ্রন্ট কেবল কেন্দ্রে থাকবে না, গঠিত হবে প্রতিটি শহরে, পাড়ায়, মহল্লায়। গঠিত হবে বায়ান্নতে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ এবং ঊনসত্তরে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যেভাবে গঠিত হয়েছিল তার চাইতেও সুগঠিত, সুবিস্তৃত এবং স্থায়ী আকারে। সমাজতন্ত্রপন্থি দলগুলোর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ঐক্যবদ্ধ হবে। যুক্তফ্রন্টের প্রতিটি শাখাই কাজ করবে নিজেদের উদ্যোগে; কেন্দ্র থেকে প্রচারপত্র, সাহিত্য, সংগঠক ইত্যাদি প্রেরণ করা হবে। বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে তরুণদের যুক্ত করার ব্যাপারে। সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক জাগরণও চাই; পাঠাগার পাওয়া গেলে তাকে ব্যবহার করা যাবে সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র হিসেবে। কিন্তু কোনো কাজই মতাদর্শিক লক্ষ্যবিহীন হবে না। লক্ষ্যটা হবে দেশে সামাজিক বিপ্লব, যেটা ঘটেনি; কিন্তু যার জন্য দেশের মানুষ প্রতীক্ষায় রয়েছে।

সমাজতন্ত্রীরা সুযোগ হারিয়েছেন ছেচল্লিশে; হারিয়েছেন একাত্তরে। তিপ্পান্ন বছর পরে আবার সুযোগ এসেছে; ধারণ করতে না পারলে শূন্যস্থান পূরণ করবে অন্যরা। সমাজতন্ত্রীদের আওয়াজটা হবে– ঐক্য চাই সমাজ বদলের জন্য। কোটা সংস্কার আন্দোলনটি ছিল কেবল কোটা-বৈষম্য নিরসনে। কিন্তু মানুষ সেটিকে সামাজিক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পরিণত করেছে। এই ঘটনাই বলে দিচ্ছে– রাষ্ট্র ও সমাজে যে পুঁজিবাদী বৈষম্য বিদ্যমান, তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে মানুষ প্রস্তুত। অপেক্ষা কেবল আহ্বানের। বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্ন দাবি নিয়ে যেভাবে আন্দোলন হচ্ছে; অসহিষ্ণুতা দেখা দিচ্ছে চারদিকে; তাতে বুঝতে অসুবিধা নেই– সমাজ পরিবর্তনের সুসংগঠিত আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে বিশৃঙ্খলা আরও বাড়বে। আর পুঁজিবাদ যে সংশোধিত হয়ে হিংস্রতা ভুলে মানবিক হয়ে পড়বে– এমন আশা দুরাশা মাত্র। পুঁজিবাদ আগামীতে আরও নৃশংস হবে, যদি না তাকে বিদায়ের আন্দোলন গড়ে ওঠে। পরিণতিতে তাকে বিতাড়িত করে সামাজিক মালিকানার নতুন বিশ্ব গড়ে তোলা না যায়।

আহম্মদ ফজলুর রহমান মুরাদ

লেখক:রাজনৈক বিশ্লেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

Popular

More like this
Related

ভালোবাসা দিবসের দু’টি কবিতা

এমন করে চেয়ো নাএমন করে চেয়ো না মোর দিকে!তোমার...

কোম্পানীগঞ্জে মসজিদ থেকে যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি :: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় মসজিদ থেকে...

মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে সকিনা- হানিফ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’র বৃত্তি প্রদান

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি :: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে১১৫ জন মেধাবী শিক্ষার্থীদের...

হাতিয়ায় বিপুল আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ২

হাতিয়া (নোয়াখালী) সংবাদদাতা :: নোয়াখালীর হাতিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে বিপুল...