জোরালো হচ্ছে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি, যেসব দেশে নিষিদ্ধ সংগঠনটি

Date:

টাইম ডেস্ক:
সম্প্রতি বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে বেশ জোরালোভাবে। দেশের বিভিন্ন মহল এই দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। একইসঙ্গে নিষিদ্ধের দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও পুলিশের আইজির কাছে পাঠানো হয়েছে আইনি নোটিশ।

ইসকন কি

ইসকন (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস) বা আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের যাত্রা শুরু হয় ৫৮ বছর আগে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় শতাধিক দেশে ইসকনের অস্তিত্ব থাকলেও অনেক দেশে সংগঠনটি নিষিদ্ধ।

এটির প্রতিষ্ঠাতা অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে ১৯৬৬ সালের ১৩ জুলাই এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। ইসকন মূলত বৈষ্ণব ধর্মের একটি অংশ এবং ভগবান কৃষ্ণকে কেন্দ্র করে তাদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ভক্তিযোগ বা কৃষ্ণভাবনামৃত সংস্কৃতি হাজার বছরের ধরে শুধুমাত্র ভারতবর্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে সময়ের ব্যবধানে বিশ্বের বহু দেশে সম্প্রসারণ ঘটেছে সংগঠনটির।

ইসকনের কাজ কী?

ইসকনের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে মন্দির নির্মাণ, ধর্মীয় উপদেশ দেওয়া, শ্রীমদ্ভগবদগীতা প্রচার, ভক্তি কার্যক্রম এবং দাতব্য সংস্থা পরিচালনা। মন্দির রক্ষণাবেক্ষণ এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলনও করে থাকে ইসকন। সংস্কৃতি চর্চার অংশ হিসেবে যোগব্যায়াম এবং জীবনযাত্রার ওপর শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম করে থাকে সংগঠনটি। অভাবীদের বিনামূল্যে নিরামিষ খাবারও বিতরণ করে থাকে ইসকন।

যেসব দেশে নিষিদ্ধসাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে ইসকনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ইসকন রাশিয়া এবং অন্যান্য প্রাক্তন সোভিয়েত রাজ্যে কাজ করতে সক্ষম হয়।

চীনে ইসকনের কার্যক্রমের অনুমতি নেই। মালয়েশিয়ায়ও নিষিদ্ধ ইসকন। দেশটিতে ইসকনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ধর্মান্তরকরণের অভিযোগ আছে। শিয়াশাসিত ইরানে ইসকনের ক্রিয়াকলাপের অনুমতি নেই। এছাড়া সৌদি আরব ও আফগানিস্তানে ইসকনের কর্মকাণ্ডের অনুমতি নেই।

এছাড়া কিছু দেশে এই সংগঠনকে আংশিক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ওইসব দেশের মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। সেখানে কিছু শর্ত মেনে কার্যক্রম চালাতে পারে সংগঠনটি। এ ছাড়াও তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানে ইসকনের কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারি জারি রয়েছে।

যে কারণে উঠেছে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিচিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ। তার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম ও রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ৮ দফা দাবি নিয়ে বেশ কয়েকটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গত ৩০ অক্টোবর চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় মো. ফিরোজ খান নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে এ মামলা হয়।

ইসকন নিষিদ্ধের দাবি হাসনাত আবদুল্লাহর
ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তরায় উলামা পরিষদের বিক্ষোভ
গত সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এই চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা ডিবি। এ ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) তাকে চট্টগ্রামের আদালতে তোলা হলে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সেখানে আদালত প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।

ইতোপূর্বে ইসকনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিষিদ্ধের দাবি উঠলেও এবারের ঘটনায় তা বেশ জোরালো হয়েছে। ইসকনকে আন্তর্জাতিক ‘উগ্রপন্থী’ সংগঠন দাবি করে চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে বুধবার (২৭ নভেম্বর) আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আল মামুন রাসেল। তিনি ১০ আইনজীবীর পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবরে ডাকযোগে এই নোটিশ পাঠান।

নোটিশে বলা হয়েছে, ইসকন একটি উগ্রপন্থী সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সংগঠনের প্রধান কাজ হচ্ছে উসকানিমূলক ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা, যার উদ্দেশ্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি। সংগঠনটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অধিকাংশ মৌলিক বিষয় স্বীকার করে না। সম্পূর্ণ নিজস্ব কনসেপ্ট তারা হিন্দুদের ওপর চাপিয়ে দেয়। নিম্নবর্ণের হিন্দুদের দলে ভিড়িয়ে দল ভারী করে। সনাতন মন্দিরগুলো দখল করা ও সনাতন সম্প্রদায়কে মেরে তাড়িয়ে দেয়। মসজিদে সাম্প্রদায়িক হামলা করে। কিছুদিন আগে পবিত্র রমজান মাসে ঢাকায় স্বামীবাগে মসজিদে তারাবির নামাজ বন্ধ করে দিয়েছিল ইসকন। নামাজের সময় গান-বাজনা বন্ধ রাখতে বলায় তারা পুলিশ ডেকে তারাবীর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পর এ নিয়ে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। তারা বাংলাদেশে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংগঠন তৈরি করে উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিস্তৃতি ঘটায়।

ইসকন ইস্যুতে আগামীকালের মধ্যে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চায় হাইকোর্ট
ইসকনের আন্দোলনে দেশি-বিদেশি ইন্ধন রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, বিগত সরকারের পতনের পর দেশে বিভিন্নভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পেছনেও সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশে এর আগেও তারা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী গ্রেফতার হলে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) তাকে আদালতে উপস্থাপনের পর ইসকনের নেতাকর্মীরা সম্মিলিত ও পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। এ থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে, সংগঠনটি দেশের আইন-কানুনের তোয়াক্কা করে না। নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে মনে করে। আইন-আদালত ও সরকারের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ নেই। দেশে সম্প্রীতি বিনষ্ট করার পরিকল্পনা নিয়েই চিন্ময় কাজ করছিলেন এবং এ ধরনের সন্ত্রাসী সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করছেন।

ইসকন বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ বলে নোটিশে উল্লেখ করেন আইনজীবীরা। তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ কার্যক্রম এখনই বন্ধ করা না গেলে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাসহ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে এই সংগঠনটির নিষিদ্ধ করার দাবি জানান তারা।

সূত্র ঢাকা মেইল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

Popular

More like this
Related

আগরতলায় বাংলাদেশের হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় যা বললেন আসিফ নজরুল

টাইম আন্তর্জাতিক ডেস্ক :ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা...

বাংলাদেশকে বিজেপি ও বিধানসভার বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর হুমকি

টাইম ডেস্ক :পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি নেতা ও বিধানসভার বিরোধী নেতা...

নোয়াখালীতে মৎস্য চাষ প্রশিক্ষণ উদ্ধোধন

নোয়াখালী প্রতিনিধি : ‘দক্ষ যুব গড়ছে দেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ’ এই...